হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় অগ্রণী ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল কবির, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-১ ওয়াহিদা বেগম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক-২ শ্যামল কৃষ্ণ সাহা ও মহাব্যবস্থাপক ফজলুল করিম এবং প্রধান শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক একেএম ফজলুল হককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দণ্ডাদেশ দেন।
মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ নির্দেশনা দেন। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শামীম খালেদ আহমেদ।
উভয় পক্ষের আইনজীবীরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তি মেনে নেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশায় মুন টাওয়ার নামে ২২ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। একপর্যায়ে অগ্রণী ব্যাংক ওই ভবনের ৯৮ হাজার ২৩৫ বর্গফুট (১২, ১৩ ও ১৪ তলা এবং ৬ষ্ঠ তলার ৫ হাজার বর্গফুট) কিনে নেয়। ব্যাংক ঋণের বিপরীতে এই পরিমাণ সমন্বয় করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বদলি হলে নতুন কর্মকর্তা এসে মুন টাওয়ারের মালিকের কাছে ঋণের বিপরীতে ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাবি করেন। ২০২১ সালে তিনি মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই অর্থ প্রদানের জন্য চিঠি লিখেছিলেন। মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান এই চিঠির বৈধতা নিয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে একটি মামলা করেন। ওই আবেদনে অগ্রণী ব্যাংকের চিঠির কার্যকারিতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
আদালত ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মিজানুর রহমান। হাইকোর্ট শুনানি করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চিঠির ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই চিঠির কার্যকারিতা নিয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। চিঠিটি কেন বাতিল করা হবে না এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। সেই নিয়ম নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আসামি মিজানুর রহমানের কাছে টাকার জন্য চিঠি দেন।
ওই চিঠিতে মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দাবি করা অর্থ খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এরপর মিজানুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক দুটি আবেদন করেন। ওই আবেদনে আগের আদেশ অমান্যের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এরই মধ্যে ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে মিজানুর রহমান জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নে বরগুনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরগুনার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে মিজানুর রহমানকে খেলাপি হিসেবে উল্লেখ করে। এ চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেন। অগ্রণী ব্যাংকের ওই কর্মকর্তার চিঠির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন মিজানুর রহমান। তিন আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে মঙ্গলবার পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাকে কারাদণ্ডের আদেশ দেন হাইকোর্ট।