বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। মঙ্গলবার রাজধানীর কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে তার তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। সোমবার (১৮ জুলাই) ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জেলা শহরে বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম কারণ হিসেবে নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা অটোরিকশা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিলেও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। জেলা প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগের কাছে এ সংখ্যার কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুরো ৫টি উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ত শহর নারায়ণগঞ্জ, শিল্পাঞ্চল ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় এর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার হবে। জানা গেছে, ৮০ শতাংশ গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ এসব অটোবাইকের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য। অনেক জায়গায় মিটার টেম্পারিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন ইজিবাইক আমদানি বন্ধ ও পুরনোগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার কথা থাকলেও গত কয়েক বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মহাসড়কে এই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, স্বনামধন্য সাংবাদিক, ডিপিডিসি, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, জেলা ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত হয়রানির শিকার হয়ে অটোরিকশা চলছে সড়কে। গবেষণা অনুসারে, একটি ইজিবাইকের জন্য সাধারণত চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। এবং ব্যাটারি চার্জের প্রতিটি সেটের জন্য, গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিন বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা)। এই হিসাবে, জেলায় প্রায় ৫০,০০০ ইজিবাইক বা ব্যাটারি চালিত রিকশা চার্জ করতে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৫ মেগাওয়াট এবং প্রতি মাসে ১৬৫০ মেগাওয়াট খরচ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু চুরি ও গোপনে ৮০% গ্যারেজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করে সরকার প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।
যাইহোক, অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এবং রিকশাগুলি এখন প্রধান শহরে এবং বাইরের যাত্রীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর এসব চালকের বেশির ভাগই অবৈধভাবে অল্প টাকায় বৈদ্যুতিক লাইন থেকে গাড়ি চার্জ করছেন। তারা যে গ্যারেজে এই গাড়িগুলো রাখে সেখান থেকে রাতারাতি একটি গাড়ি চার্জ করার জন্য গ্যারেজ মালিকের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চার্জ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ডিপিডিসি ও টাস্কফোর্স নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশার গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে অর্ধশতাধিক অটোরিকশার গ্যারেজের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কোটি কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে। কিন্তু করোনার পর এই অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকার অটোরিকশার গ্যারেজ ঘুরে জানা যায়, এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে অনেক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এ কারণে গ্যারেজ মালিকরা খরচ কমিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়।
তবে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের পেছনে রয়েছে ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের একদল অসাধু কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসি ফতুল্লা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা প্রায়ই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। তবে সর্বশেষ অভিযান কবে, কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া, চলবে। বন্দর পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় সব সময়ই অভিযান পরিচালনা করছি এবং জরিমানা করছি। তবে সর্বশেষ অভিযান কবে হয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে সাধারণ মানুষের মতে, যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে এসব যানবাহনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের উচিত বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করা অথবা বিশেষ সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অটোরিকশার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
উল্লেখ্য, এর আগে গত সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলবে। বৈঠকে আরো বলা হয়, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সরকার প্রতিটি মসজিদে নামাজের পর এসি বন্ধ এবং রাত ৮টার পর দোকান-বাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস মিটিংও অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যানবাহনে তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমবে।