আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে দেশ ও দেশের বাহিরে। যদিও বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দুলগুলোর মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিবে না বিরোধী দল বিএনপি কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সংবিধানের বাহিরে যেতে রাজি নয়। নির্বাচন বিষয়ে বিদেশী রাষ্টদূতরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাাগিত দিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে। রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্য করে নির্বাচন ইস্যুতে হস্তক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে যা বললেলন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
গণতন্ত্র ও নির্বাচন ইস্যুতে সব বিদেশি কূটনীতিকদের এক হাত নি/লেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। কারও নাম না করে তিনি বলেন, কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে সরকার ভিন্নভাবে চিন্তা করবে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা (বিদেশিরা) কতটুকু বলতে পারে তা তাদের মনে রাখা উচিত। অন্য দেশের কূটনীতিকরা তাদের দেশে ঠিক কতটুকু বলার অধিকার রাখেন? তাদের সতর্ক থাকতে হবে যে তারা কোন কিছুই শিষ্টাচারের বাইরে না যায়। বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বারবার কূটনীতিকদের তাদের সীমার কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি ‘লাইন অতিক্রম করলে’ বিভিন্ন দপ্তরে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার ইঙ্গিতও দেন। তিনি বলেন, আমরা যেমন অতিথিপরায়ণ এবং সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের জন্য আমাদের দেশের অধিদপ্তর দরজা খোলা রাখি, স/কল মন্ত্রণালয়, সব অধিদপ্তর, সব বিভাগের জন্য প্রযোজ্য; তারা যেন তা অতিক্রম না করে। য/দি করেন তবে আ/মরা অন্য কিছু ভাববো। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের বিজয়, সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট এবং সাম্প্রতিক সফর নিয়ে মন্ত্রণালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের বিদেশি কূটনীতিকদের পরামর্শের প্রয়োজন নেই। গতকাল প্রতিমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টারের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, যতই সমালোচনা হোক না কেন, আমরা বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলব। এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমি নিজের কানে শুনিনি, যেহেতু ভায়া মিডিয়া এসেছে এবং তার বক্তব্য নিয়ে এর আগেও বিতর্ক হয়েছে, আমি তা মানি না। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করছি না। কিন্তু আমি চেক করব। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, তবে একটা কথা বলি, এসব কথা আমরা সব সময় আলোচনায় বলি, সংবাদমাধ্যমে (গণমাধ্যম) নয়। কারণ, হয়তো অনেকেই বিব্রত হবেন। ঘরোয়া আলোচনায় কী হচ্ছে তা হয়তো আমরা জানার চেষ্টাও করি না। আমরা সবাইকে সম্মানের সাথে আচরণ করার চেষ্টা করি। এর মানে এই নয় যে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবাধে হস্তক্ষেপ করবে।
কারও নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না : এদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, সরকার কারও নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সে দেশের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। ওই বৈঠকে শারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক। শাহরিয়ার আলম বলেন, জবাবে আমি বলেছি, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। তবে কে নির্বাচনে আসবে আর কে আসবে না তা নিশ্চিত করতে পারছি না। নির্বাচনে কে আসবেন আর কে আসবেন না তা নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও দলের ওপর নির্ভর করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার নিরিখে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো নেতৃত্ব নেই, চালিকাশক্তি নেই, কেন তারা টেনে আনলেন। অতীতের মালপত্র, তারা জনগণকে প্রকৃত ব্যাখ্যা দিতে পারে না। বাংলাদেশ কখনোই কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারে না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না।
ফখরুলের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : বুধবার চট্টগ্রামের জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ম/নে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘বিএনপি যে জনগণের ওপর আস্থা রাখে না এটা আরেকটি প্রমাণ। তাদের উদ্দেশ্য বিদেশের মুখাপেক্ষী বা এসব দেশের মুখ থেকে কিছু বের করা বা বর্তমান সরকারের সঙ্গে ওইসব দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন। উইকিলিকসের ফাঁ/স হওয়া তা/রবার্তায় প্রমাণ করে যে তারিক রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা ছিলেন। এ কারণে বিএনপি মহাসচিবের উচিত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদের ক্ষমা করতে বলা। তা না করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
২০১৪ সালের মতো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে: প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অবশ্যই বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য হবে। এ সময় তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেটি যেভাবে গ্র/হণযোগ্য হয়েছিল আগামী নির্বাচনও সে/ভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে। এ সময় তার সম্পূরক প্রশ্ন ছিল, জাতি কি ২০১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে? মৃদু হেসে প্রশ্ন এড়িয়ে যায় তিনি। তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে নেই।
মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল: জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী এর প্রচার ও সুরক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জা/নান শাহরিয়ার আলম। বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র এবং আগামী তিন বছরের জন্য মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী এর প্রচার ও সুরক্ষার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, মানবাধিকার দু-একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এর ক্যানভাস অনেক বড়। উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪টি শূন্য আসনের জন্য ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয়। নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ যতগুলো আন্তর্জাতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ১৮৯ ভোটের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৬০ ভোট। তিনি বলেন, এ ধরনের অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রচেষ্টা এবং অঙ্গীকারের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। এর আগে বাংলাদেশ ২০০৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না বাংলাদেশ বলে সকর্ত করেন রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, কোনো দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে কথা বলার নিদিষ্ট সীমা অতিক্রম করা আইন লঙ্ঘনের শামিল।