২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া বিদ্রোহ দেশের ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত। এই বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ মোট ৭৪ জনের মৃত্যু হয়। এখন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মঈন ইউ আহমেদ তার ইউটিউব চ্যানেলে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় কী ঘটেছিল এবং সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেমন ছিল, তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার আমি যখন তদন্তের আদেশ দেই, তখন আমাকে বলা হয় যখন সরকার এই বিষয়ে তদন্ত করছে, তখন আমাদের এর প্রয়োজনটা কী? ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
মঈন ইউ আহমেদ জানান, সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেফটেনেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যিনি বর্তমানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি, কারণ অনেককে জেলে রাখা হয়েছিল এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের বের করতে পারবেন।
মঈন ইউ বলেন, সেদিন (২০০৯ সালের) ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে সাড়ে ৭টায় সেনাসদরের প্রতিদিনের মত কাজ শুরু হয়। সকালে আমি সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় সিজিএস লেফটেনেন্ট জেনারেল সিনহা আমার কাছে এসে বলেন, আমাদের কাছে কিছু মর্টার আছে, যা সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না। এর গুদামজাত এবং রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের জন্য কঠিন। বিডিআর এগুলো ব্যবহার করে। তিনি আরো বলেন, এরপর আমি বিডিআরের ডিজি জেনারেল শাকিলের সঙ্গে কথা বললে তিনি এগুলো নিতে রাজি হন। আমার বিশ্বাস তিনি তখন পর্যন্ত এই বিদ্রোহ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এরপর আমি আর সিজিএস মিটিংয়ের জন্য যাই। ৯টায় সেই মিটিং শুরু হয়। আমারা সবাই তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ি সেখানে। সাড়ে ৯টায় তার দিকে আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ রুমে প্রবেশ করেন এবং আমাকে বলেন, পিলখানায় গণ্ডগোল হচ্ছে। আপনার দিক-নির্দেশনা প্রয়োজন। কিছুক্ষণ পর আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের ফোন ব্যস্ত পাই।
মঈন ইউ আহমেদ জানান, সামরিক গোয়েন্দারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে তাকে জানানোর পর তিনি একটি ব্রিগেড প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন, যা ‘অপারেশন রেস্টোর অর্ডার’ নামে পরিচিত হয়। তিনি আরও জানান, বিদ্রোহীরা বিডিআরের গেটগুলোর সামনে রকেট লঞ্চার এবং মর্টার স্থাপন করে। ১১টা পর্যন্ত বিদ্রোহীরা অনেক অফিসারকে হত্যা করে।
তিনি গণমাধ্যমের লাইভ কাভারেজের সমালোচনা করেন, যা বিদ্রোহের পরিস্থিতি ছড়িয়ে দিতে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন। ক্যাপ্টেন শফিকের নেতৃত্বে ৩৫৫ জন র্যাব সদস্য পিলখানায় পৌঁছালেও, অনুমতি না পাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন।
মঈন ইউ আহমেদ বলেন, ১১:৪৫ মিনিটে সরকার জানায় যে রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে এবং বিদ্রোহীরা সেনাবাহিনীকে এলাকা ছেড়ে যেতে বলেছে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং হুইপ মির্জা আজম আলোচনার জন্য পিলখানায় যান। সেদিন বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়, কিন্তু মঈন ইউ আহমেদ বিদ্রোহীদের দাবি মানার বিরুদ্ধে ছিলেন।
মঈন ইউ আহমেদ ভিডিওতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে তার লেখা বই খুব শিগগিরই প্রকাশিত হবে।