আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনোতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রত্যহ তাদের কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিও তাদের কর্মসূচী যথারীতি পালন করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি জানা গেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা টাদের কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয় এবং সেখানে অনেক অরাজকতারও সৃষ্টি হয়।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নেতাকর্মীদের প্রতিটি ফোঁটা রক্তের জবাব দেওয়া হবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বুলেটের মুখে চরম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ (বুলু) হামলার শিকার হয়েছেন। এতে তিনি নিজে ও তার স্ত্রী শামীমা বরকত (লাকি) আহত হন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর বনানীতে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য তাবিথ আউয়াল, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও কেন্দ্রীয় নেত্রী শ্যামা ওবায়েদ আহত হন।
এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, আজ সারাদেশে বিএনপির কর্মসূচিতে এই অবৈধ নিশিরাত সরকারের দুর্নীতিবাজ বাহিনী ও তাদের দলীয় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে জাতীয় পর্যায়ে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের রক্তাক্ত করেছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা মনে করেন আপনাদের কর্মীরা অবাধে এসব অপকর্ম করবে আর বিএনপি নীরব থাকবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা প্রতিটি রক্ত কণিকার উপযুক্ত উত্তর দেব। আমি প্রতিটি আঘাতের যথাযথ জবাব দেব।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের র্যাব নেই, পুলিশ নেই। কিন্তু আমরা দুই হাতে বুলেটের সামনে আমাদের বুক পেতে পারি, সেই সাথে চরম প্রতিরোধের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, বরকত উল্লাহ বুলুর রক্ত কি জাতীয়তাবাদী শক্তি মেনে নেবে? আজ কি তাবিথ আউয়ালের রক্ত মানা হবে? আজ সেলিমা রহমানের উপরোক্ত হামলা কি মেনে নেবে? এটা কখনই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দাবির জন্য লড়াই করছিলাম, কিন্তু আমরা গান্ধীবাদে বিশ্বাস করি না, আমরা প্রতিরোধ করতেও জানি।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বনানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিও আওয়ামী লীগ সহ্য করেনি। সেখানেও তারা বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। সরকার পরিচালনাকারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানও হামলা থেকে রেহাই পাননি। কর্মসূচি শেষ হতে না হতেই আওয়ামী লীগের পেটোয়াবাহিনী ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে তাবিথ আউয়াল একটি ঘরে ঢুকে তার ওপর হামলা চালায়। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সেখানে আহত হন শ্যামা ওবায়েদ, আহত হন ছাত্রদল-যুবাদলের অনেক নেতাকর্মী, আহত হন প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী। তিনি বলেন, তারা গত 14 বছরে পেলেপুশে একটি নেকড়ে বাহিনী তৈরি করেছে। তাদের উস্কে দেওয়া হয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, তরিকুল ইসলাম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, শান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন কখনই কোনো ধরণের সমস্যা বা অরাজকটার সৃষ্টি করতে পারে না। আন্দোলন হওয়া উচিত শান্তিপূর্ন। যেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে সেখানে বাইরের কেউ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করতে সাহস পায়না। দেশের মানুষের প্রত্যাশা এই যে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনের আগাম কর্মসূচীগুলো যাতে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।