২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হতে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করে বিএনপির আজকের এই অবস্থার পিছনে জামায়াত অনেক খানি দায়ি। জামায়াতকে জোটে রাখার কারনে দেশের মানুষ বিএনপি থেকে দূরে সরে গেছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন। বিএনপির সঙ্গে নেই জামায়াত মন্তব্য করে যা বললেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতকে রাখা না-রাখা আলোচিত-সমালোচিত এক রাজনৈতিক ইস্যুর নাম। বিভিন্ন ইস্যুতে দলদুটির মধ্যে টানাপোড়েনও দীর্ঘদিনের। জামায়াতের সঙ্গে না থাকার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপও ছিল বিএনপির ওপর। বিষয়টির পক্ষে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিতে দেখা গেছে বিএনপির কোনো কোনো নেতাকে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কখনো কিছুই শোনা যায়নি। তবে এবার দুই দলের মতপার্থক্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে
সম্প্রতি শফিকুর রহমান জামায়াতের আমির ড. এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ টাইম টেলিভিশনের হাতে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, দলের ঘরোয়া সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন জোটের সঙ্গে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২৮ অক্টোবর, ২০০৬ তারিখে, জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। সেদিন থেকে পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এটা আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, এ ধরনের অকার্যকর জোট বছরের পর বছর চলতে পারে না।
এদিকে ২০ দলীয় জোট ও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বের কারণ জানতে চাইলে জামায়াতের একজন উচ্চপদস্থ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়; বরং দীর্ঘ দিনের।
এ ব্যাপারে প্রধানত তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন এই জামায়াত নেতা।
তিনি বলেন, ক্ষোভের সূত্রপাত মূলত ২০০৬ সালের পর থেকে পরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চে জামায়াত নেতাদের বিচারের নামে যে কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরবর্তীতে একের পর এক জামায়াত নেতার ফাঁ/সি হয় কিন্তু জোটের সদস্য হিসেবে বিএনপি এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। যা জামায়াতকে ভাবিয়ে তুলেছিল।’
দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে গঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও জামায়াতের কোনো কার্যকর অংশগ্রহণ ছিল না। মূলত বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে পাশ কাটিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে, যেখানে জামায়াতকে অবহেলিত করা হয়েছে। এতে দলের (জামায়াত) মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে,’ বলেন নেতা।
তাত্ত্বিক কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বিগত সময়ে জামায়াত নেতাদের বেশ কিছু কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি; জোটের সদস্য হিসেবে এটা খুবই দৃশ্যমান। তাদের (বিএনপি) সঙ্গে থাকা কতটা যৌক্তিক, প্রশ্ন করেন তিনি।
এছাড়া ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির ওপরও চাপ ছিল। কিন্তু সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দল বা জোটের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি; তবে বিএনপির একাধিক নেতা প্রকাশ্যে জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেছেন, যা জোটের সদস্য হিসেবে জামায়াতকে বিব্রত করেছে। এটিকেও ক্ষোভ সঞ্চারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন এই জামায়াত নেতা।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম ও ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন।
পরবর্তীতে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে এই জোট। পরবর্তীতে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮টি দল এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে আরও ২টি দলের সমন্বয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয় যার অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিনের টানাপোড়েন ও বিভিন্ন সময়ে দলকে মূল্যায়ন না করার কারনে বিএনপি জোট ত্যাগ করেছেন বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তারা বিএনপি সাথে নেই বলে স্পষ্ট করেন তিনি।