বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বাহিরে থাকার কারনে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়েছে পড়েছে। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীতের মাধ্যমে ভিন্ন রুপ প্রকাশ হচ্ছে। যদিও সরকারের নানা প্রতিরোধের মধ্যে তারা নিদেজের সক্ষমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অনেকটা সাফল্যও পাচ্ছেন এমনটায় দাবি করেছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্ভরশীল দল নয় মন্তব্য যা বললেন বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
বিএনপি সম্পর্কে একটি প্রচলিত কথা হলো, এটি কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল দল নয়; সমর্থক দল, জনগণের দল। ভোটের সুযোগ পেলে চোখ বন্ধ করে বিএনপিকে ভোট দেবেন; কিন্তু মাঠের আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, সমাবেশ বা দলীয় কর্মকাণ্ডে তাদের খুব একটা পাওয়া যাবে না। এক-এ/গারো সরকার থেকে শুরু করে গত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। শুধু ক্ষমতার বাইরে থাকা নয়; এমন কোনো নির্যাতন নেই যা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ প্রায়ই একটা কথা বলে- ২১শে আগস্টের মতো কোনো ঘটনা তাদের আমলে হয়নি। তবে বিএনপি কর্মীরা যেমন জানে, দেশের মানুষও তেমন জানে; গত ১৬ বছরে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে দল হিসেবে ভাঙতে, দুর্বল করতে এমনকি নিশ্চিহ্ন করার করার জন্য এমন কিছুই নেই যা করেনি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা মামলায় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া; তাকে বিদেশে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে না দেওয়া; ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি; বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা এনে তাদের স্বাভাবিক জীবন কার্যত পঙ্গু করা; বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে গু/ম, বিচারবহির্ভূত হ/ত্যা, পুলিশি নি/র্যাতনসহ অনেক কিছুই করা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিএনপি ভা/ঙা তো দূরে থাক; উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকর্মী দেশ ছাড়েননি বা বিএনপি ছাড়েননি। এটাই বিএনপির শক্তি।
বিএনপিকে নিয়ে সরকারি দলের তরফ থেকেও কম কটূক্তি হয়নি। বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে কি না; তার সেই ক্ষমতা আছে কিনা; সাংগঠনিকভাবে বিএনপি কতটা সক্ষম তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তোলে আওয়ামী লীগ। এদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ‘কো/মরভাঙা দল”। আওয়ামী লীগের ভাষায়, এই কোমরভাঙা দলটি যখন বিভাগীয় বৈঠক করছে, তখন সরকার কর্মী ও পেটোয়া বা/হিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। আমার মনে হয়, এত নি/র্যাতনের পর বিএনপি এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে আওয়ামী লীগ কল্পনাও করতে পারেনি।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে যে সমাবেশ শুরু হয়েছিল, তা এখন সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিএনপির দাবি খুবই স্পষ্ট- এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে; সংসদ ভেঙে দিতে হবে; একটি নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং সেই সরকারের অধীনে গঠিত একটি নতুন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে- সরকার কার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে? মজার ব্যাপার হলো, এরশাদ পতন আন্দোলনের শেষ দিনেও একই প্রশ্ন উঠেছিল।
এরশাদের পতনের সময় সিদ্ধান্ত হয় মওদুদ আহমদ (প্রয়াত) উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে ওই পদে নিয়োগ দেবেন এরশাদ। এমনকি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে একটি শর্তও রেখেছিলেন- নির্বাচনের পর তাকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরতে দিতে হবে। সবকিছু সেভাবেই ঘটেছে। এরপর সেই চরম অসাংবিধানিক কাজকে বৈধতা দিতে সংবিধানের একাদশ সংশোধনী আনা হয়। এ ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, সংবিধান জনগণের জন্য; সংবিধানের জন্য জনগণ নয়।
তবে চট্টগ্রামে সমাবেশ অবরোধ করে যখন মানুষের স্রোত থামানো যায়নি, তখন ময়মনসিংহে সমাবেশকে সামনে রেখে কোনো ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমাবেশের দিন ঠেকানো যেতে পারে এই চিন্তা করে বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক নেতাকর্মী সমাবেশের আগের রাতেই পলিটেকনিক মাঠে পৌঁছান। কেউ কেউ খুব ভোরে এসেছে। বাস, ট্রেন, অটোরিকশা- যেভাবেই হোক জমায়েতে পৌঁছানো যায়। অনেকেরই রাত থাকার জায়গা ছিল না। তাই কেউ মাঠে, কেউ পাটি পেতে ঘুমিয়েছেন ফুটপাতে। গফরগাঁওয়ে বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার সন্দেহে ক্ষমতাসীন দলের একদল কর্মীকে পিটিয়ে আ/হত করেছে নেতাকর্মীরা। একজনের হাত কেটে ফেলা। বাস্তবতা হলো, সরকারি বাহিনী ময়মনসিংহ আক্রমণ করেছে। তারা গু/লি ছুড়েছে, তারা ককটেল মেরেছে; ধাপে ধাপে তারা সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে। আর মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মুন্সীগঞ্জে বিএনপি কর্মী হ/ত্যার পর যেমন মামলা হয়েছিল বিএনপির বিরুদ্ধে। মামলায় এমন অনেক আসামি আছেন যারা দেশেও নেই।
এত কিছুর পরও যখন মানুষের স্রোত থামানো যায়নি; কর্মীদের দমন করা যায়নি; এরপর খুলনার জনসভাকে ঘিরে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেয় সরকার। সমাবেশের দুই দিন আগে থেকে সব ধরনের নৌ-স্থল পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু যে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়; চরম বিপাকে পড়েছেন খুলনা অঞ্চলের লাখ লাখ সাধারণ মানুষও। এরপর মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি কর্মীদের সংরক্ষিত যানবাহন এবং অগ্রিম অর্থ প্রদান; ক্ষমতাসীন দলের চাপে পরিবহন মালিকরাও তাদের ফেরত দিয়েছেন। মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটেছে। নৌকা, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, রিকশা- যে ভাবে পেরেছে সে ভাবে সমাবেশে যোগ দান করেছে ।
বিএনপির সমাবেশে যোগদানের ন্যূনতম মাশুল হচ্ছে এলাকায় থাকতে স/মস্যা হওয়া, মামলায় আসামি হওয়া, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ও সরকারি বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়া। আর সর্বোচ্চ মূল্য পুলিশের গু/লিতে মৃ/ত্যু। গত দুই মাসে পুলিশের গু/লিতে অন্তত পাঁচজনের মৃ/ত্যু হয়েছে। এসব কিছু বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনে সামান্যতম ভীতিও সঞ্চার করতে পারেনি। এতটুকুও আটকাতে পারেননি।
বিএনপি সমর্থক নন এমন বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন বিএনপির কর্মীদের মতো একই পরিণতির আশঙ্কা সত্ত্বেও জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। সরকারের অত্যাচারী পদক্ষেপ এবং সীমাহীন লু/টপাটের মূল্য দিতে, দেশের গোবেচারা ও ছা-পোষা মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই মানুষ নি/র্যাতিত হওয়া বা বু/লেটে নি/হত হওয়াকে পরোয়া করে না।
প্রসঙ্গত, সরকারের লাগাতার দু/র্নীতির ও লু/টপাটের মাশুল জনগণকে দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সাংসদ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, দেশের জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।