বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক বিএনপি’র রাজনৈতিক নেতারা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করছেন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দলীয় নেতারা একে অপরের দোষারোপ করে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করছে। এবার বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনা করে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন মাহবুবুল হানিফ।
তিনি বলেন, বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হ/ত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যা এবং ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত ২৬ হাজার নেতাকর্মীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। একই উৎস। ৭১ সালের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে বিএনপিকেও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আইভি রহমানের ১৮তম মৃ’ত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনা সুপরিকল্পিত। তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, মুফতি হান্নানসহ জঙ্গিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মুফতি হান্নানের ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন পাকিস্তান থেকে অ্যাসল্ট গ্রেনেড এনেছিলেন। জ্বালানিবিহীন একটি দেশে এই বোমা কীভাবে আনল সরকার?
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একটি ঘৃণ্য, বর্বর ঘটনা। ৭৫ এর পর থেকে এটি সবচেয়ে লজ্জাজনক দিনগুলির মধ্যে একটি। এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে দমন করা। যাতে বিএনপির আমলে লুটপাটের কোনো জবাবদিহিতা না থাকে। মির্জা ফখরুল ছিলেন একজন শিক্ষক। বিএনপির মতো উচ্চশিক্ষিতরা কতটা দলীয় রাজনীতি করতে পারে, আমি বুঝি না।
হানিফ বলেন, কয়েকদিন আগে তারেক জিয়াকে লন্ডনে বসে ফেসবুকে বলতে দেখেছি, ২১শে আগস্টের ঘটনা আওয়ামী লীগ করেছে। তিনি তাত্ত্বিকভাবে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার কথা ছিল। 23 বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন এটি শুরু হওয়ার মাত্র দেড় ঘন্টা আগে নেওয়া হয়েছিল? মুক্তাঙ্গনে ইঞ্চি ইঞ্চি নিরাপত্তা ছিল। কি রসিকতা, মিথ্যা কথা। এই তারেক রহমান একজন মিথ্যাবাদী, কাপুরুষ ও নির্লজ্জ। ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকলে এ ধরনের মিথ্যা বলা সম্ভব নয়।
হানিফ বলেন, ২১শে আগস্টের মতো ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেছে বলে মনে হয় না। সেদিন দেখলাম মির্জা ফখরুলসহ অনেক বিএনপি নেতা এই ঘটনার ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অবাক হতে হয়। ২১ আগস্টের ঘটনার পর তারা রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
আইভি রহমানের কথা স্মরণ করে হানিফ বলেন, আইভি রহমানকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। এটি একটি ভয়ঙ্কর, রোমাঞ্চকর দৃশ্য। এই হামলা করেছে বিএনপি-জামায়াত। হামলার পরপরই আমাদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু হয়। যাতে বোমারুরা নির্বিচারে চলে যেতে পারে। সিটি করপোরেশনের একটি গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে এনে পানি দিয়ে ধুয়ে নিদর্শন ধ্বংস করে।
২১শে আগস্টের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওই দিন একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছিল। আমাদের তৎকালীন নেতা আব্দুল জলিল মামলা করতে গিয়েছিলেন। এই থানা তাকে ওই থানায় হস্তান্তর না করে মামলা নেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো নির্দেশ ছিল না। পরে সাধারণ ডায়েরি নেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সংসদে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে রসিকতা করেছেন। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, শেখ হাসিনাকে কে মারবে! তিনি নিজেই একটি ব্যাগে বোমাটি ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। গালি এখানেই শেষ নয়। এ ঘটনায় ব্যাপক চাপের মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএনপি-জামায়াত সরকার। বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র জড়িত। কি একটি হাস্যকর ফাঁকি বক্তব্য.
এরপর আসামি গ্রেফতার, জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। এর একটাই কারণ, এই হত্যাকাণ্ডে বিএনপি জড়িত এবং তারা সেই দায় এড়াতে চায়।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মশিউর আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ধ’র্ম প্রতিমন্ত্রী ড. ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. সিদ্দিকুর রহমান।
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন সাধারন মানুষ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতারা। এমই দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তারা সারাদেশের মানুষকে বিএনপির করা যড়যন্ত্ররে ফাঁদে পা না দেওয়ারও অনুরোধ করেন সাধারন মানুষের কাছে।