সিলেট ১ আসন বরাবরে একটি ভিন্ন ধরনের আসন এবং এটিকে সব সময় মর্যাদার আসন হিসেবেই ধরে নেয়া হয়। ‘মিথিক্যাল’ এই আসনে যে দলের প্রার্থীই জয়ী হোক না কেন সেই দলই সাধারণত ক্ষমতায় গিয়ে থাকে। এর আগে গত ৬টি নির্বাচনে এমন ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং সদর নিয়ে গঠিত এই আসনে এবার বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। যেখানে নাম উঠেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানের নাম। জয়ী হওয়ার জন্য এ আসনে ব্যক্তি ইমেজও ফ্যাক্ট বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে আসনটি পরিদর্শন ও বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
‘সিলেট-১ যার ক্ষমতা তার’ এই আসনটিকে ঘিরে একটি মিথ তৈরি হয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে এটা প্রমাণিত হয়েছে। অতীতে এ আসন থেকে বিজয়ী দলের প্রার্থীরাও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার হন। এছাড়া বিএনপির প্রয়াত প্রভাবশালী নেতা এম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে অর্থমন্ত্রী হন। বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এ কে আব্দুল মোমেনও এ আসনের সংসদ সদস্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমরান আহমেদের মতে, এখানে দলীয় প্রতীকই একমাত্র বিবেচ্য নয়। ভোটাররা একজন প্রার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এ আসনের অধিকাংশ ভোটার শহরাঞ্চলের হওয়ায় জাতীয় ইস্যুগুলো তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয়।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আব্দুল আলিম জানান, গত নির্বাচনে এ আসন থেকে এ কে আব্দুল মোমেন নৌকা নিয়ে এবং আব্দুল মুক্তাদির ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চমক থাকতে পারে। জিয়া পরিবারের কেউ আসতে পারেন। ডা. জোবায়দা রহমান বা তার কন্যা জাইমা রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
আসনটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ এলাকার মেয়ে হিসেবে তারেকের স্ত্রী জোবায়দা রহমান এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন। তবে জোবায়দার এর দুদকের মামলার জটিলতা বিবেচনায় মেয়ে জাইমা রহমানকে স্বচ্ছ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টা এখনই খোলাসা করতে চাইছেন না কেউ। আপাতত এ আসনের কান্ডারী হিসেবে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নাম নেতাকর্মীদের মুখে থাকলেও তারা বলছেন, জিয়া পরিবারের কেউ এলে নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী সাধুবাদ জানাবে।
সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত। আমাদের মহানগরের ২৭টি ইউনিট। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সংগঠিত করে কাজ করছি। আগামী ২০ নভেম্বর সিলেটে জনসভার প্রস্তুতি চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শুধু সিলেট-১ আসন নয়, সারাদেশে জয়ী হবে।
আগামী নির্বাচনে এ আসনে ধানের শীষের কান্ডারী কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুক্তাদির ছিলেন, তিনি আছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার আস্থার সম্পর্ক, তিনি পেতে পারেন।
আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে জিয়া পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন কোনো আলোচনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো আলোচনা নেই। তবে মাঝে মাঝে এমন আলোচনা শুনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমান যদি এই সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাব।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহাবুবুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর সরকার পতনের জন্য সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ ও এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আগামীতে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আলোচনায় বলেন, আমি যতদূর বুঝেছি, গতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন মুক্তাদির। কেউ বেশি চাইতে পারে, কিন্তু আপাতত মুক্তাদিরের বাইরে কাউকে দেখছি না।
জিয়া পরিবার থেকে কেউ আসার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি। তবে দলীয় কোনো আলোচনা শুনিনি। এই আসনটি একটি ভিআইপি আসন। জিয়া পরিবারের কেউ এলে আমরা খুশি হব।
মহানগর যুবদল নেতা মির্জা সম্রাট জানান, সিলেট-১ আসনে মুক্তাদির চৌধুরী রয়েছেন। তিনি সিলেট মহানগর, সদর উপজেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সংগঠিত করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পাবে ধানের শীষ।
মুক্তাদির চৌধুরী এখানে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছেন। আমি ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে আশাবাদী।
এ আসনে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য নির্বাচনে আসছে কিনা বা এমন আলোচনা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা দলের প্রধান হিসেবে আছেন, তাই আমি এখানে কে বা কারা আসছেন সে বিষয়ে কোন কিছু বলতে চাই না। তাদের কেউ যদি মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে আসেন, তাহলে আমি স্বাগত জানাবো।
ডঃ এনামুল হক চৌধুরী যিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন, তিনি বলেন, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা কাজ করে চলেছি।