আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। রাস্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের সাথে এবার সংলাপে বসতে যাচ্ছেন। তবে দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে এখনও যায়নি। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই সংলাপকে একটি ভেল্কিবাজি হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন এটা শুধু শুধু সময় নষ্ট। এই ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শ্রেফ একটি সাজানো আনুষ্ঠানিকতা, যেটা লোক দেখানোর জন্য করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করার কথা বলছেন সেটা ‘অর্থহীন’ এমনটাই জানিয়েছেন বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সাজানো সংলাপে যাওয়া সময়ের আপচয়, যেখানে গিয়ে কোনো লাভবান হওয়ার মতো কিছু নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবারও বিভিন্ন রকম কলা-কৌশল শুরু করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন। কিসের সংলাপ? এই সংলাপ ইতোমধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। পরিষ্কার করে বলেছে, এই সংলাপে কোনো লাভ হবে না। অর্থহীন সংলাপ। কারণ নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নাই, যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হয়।
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব স্পষ্ট কথা- সবার আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। আর পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তারপরে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে জনগণের ভোটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন। এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।’
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আসেন, আমরা সবাই ওই লক্ষ্যে- অর্থ্যাৎ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি- এই দুটিকে এক সাথে করে আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই যে, আসুন, গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার এবং আমাদের সমস্ত অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আর সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করি এবং কল্যাণময় একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি।’
খালেদা জিয়ার মুক্তি আজকে জনগণের দাবি মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি গণদাবি। এই দাবি অবশ্যই সরকারকে মেনে নিতে হবে। আর সরকার যদি এই দাবি মেনে না নেয় তাহলে সব সময়ই গণদাবি অস্বীকার করার জন্য অতীতের সরকারগুলোর যে অবস্থা হয়েছিল, তাদেরকেও একই পরিণাম বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে আমরা আন্দোলন করছি। সারাদেশে আমাদের অসংখ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক সমাবেশ থেকে, লাখো মানুষের কণ্ঠ থেকে একটি আওয়াজই এসেছে- দেশনেত্রীর মুক্তি চাই।’
উল্লেখ্য, বিএনপি বর্তমান সময়ে অনেকটা সংকটময় মুহুর্ত পার করছে। কারন দলটিতে এখন কোনো নেতৃত্ব নেই বললেই চলে। বেগম খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিশেষ বিবেচনায় কারাগারের বাইরে থাকলেও তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন যিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। তাই দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো এখন আর কেউ নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে তারেক জিয়া মাঝে মাঝে নির্দেশনা দিলেও সেটা তেমন গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।