বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান আন্দোলনের তথ্য যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি বিরোধী দলের অনেক নেতা পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নেতাকর্মীদের মধ্যে ফোনালাপের রেকর্ড পাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে অনেক নেতাকর্মী উৎসাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করছেন। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই এমন করছেন।
পুলিশের দাবি, অ/গ্নিসংযোগ ও ভা/ঙচুরের মতো না/শকতামূলক কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় আগাম তথ্যের কারণে।
এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে বেগ পেতে হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। কর্মসূচি বাস্তবায়নের আগেই গ্রেপ্তার করা হয় অনেককে।
এদিকে পুলিশের সোর্স হিসেবে অনেক নেতাকর্মী কাজ করছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, ‘এগুলো সরকারের সাজানো নাটক। আ/গুন-স/ন্ত্রাসের পেছনে সরকার সমর্থকরা জড়িত।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে দলটির ৪ হাজার ৬১০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৫৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৭ হাজার ৮৩০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপ গ্রুপে তথ্য আদান-প্রদান করছে। সেখানে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অ/গ্নিসংযোগের নিরাপদ সময় হিসেবে পুলিশ বদলির পরিবর্তন বেছে নেওয়া হচ্ছে। মেসেঞ্জার গ্রুপের কেউ কেউ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সেই বার্তাগুলির স্ক্রিনশট পাঠাচ্ছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ফোনালাপের সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যও পুলিশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সরবরাহ করছে। ফলে ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত রয়েছে। স/হিংসতা অনেকাংশে রোধ করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ আগাম খবর পাওয়ায় না/শকতা অনেকাংশে কমেছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকেই আ/গুন দিতে চান না। টাকা দিয়েও বিএনপি-জামায়াত মাঠকর্মীদের না/শকতার আন্দোলন কমাতে পারছে না।
তারা আরও বলেন, অ/গ্নিসংযোগকারীরা ফোনে যে ইশারা ভাষায় কথা বলছে তাও আমরা জেনেছি।
পুলিশের প্রাপ্ত কিছু তথ্য দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম কাছে এসেছে। এনক্রিপ্ট করা অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশটে সোমবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার এক নেতা লিখেছেন, “আগামীকাল থানা ও কলেজ এলাকায় আলাদা মিছিল হবে। ১০ থেকে ১৫ জনেরই হোক মিছিল করা হবে। যদি না হয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুধবার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতাও লেখেন, ‘আপনাদের আলাদা মিছিল করতে বলা হয়েছিল? আজকে কেউ মিছিল করেনি। কিন্তু পদে সবাই বসে আছেন। মিছিল করতে না পারলে সবাই পদ ছেড়ে দাও।’
একই দলে গ্রুপে আছে, ‘সবাই মশাল মিছিলের প্রস্তুতি নিতে হবে’। আমরা যদি নিরাপদ জায়গা পেলেই আমরা অবশ্যই ৬/৭ এ মিছিল করব। লোক আনার চেষ্টা করবা। কাল সকালে সবাই আরো লোক নিয়ে আসবে। আমরা ৬/৭টার মধ্যে মিছিল করে ফেলব। এসময় পুলিশের উপস্থিতি কম থাকে। অবস্থানটা একটু পরে জানাবো।
পুলিশের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে কমলাপুর মাঠ সড়ক থেকে খোকা কমিউনিটি সেন্টারের দিকে মিছিল হবে। 100 নিশ্চিত।
২২ নভেম্বর পুলিশের মিরপুর বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাশকতার বার্তা পান। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওই বার্তায় বলা হয়, ‘২২/১১/২০২৩ তারিখে দুপুর ২টা ৩১ মিনিটে আবুল হাসান টিপুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বাবর (০১৬২১৮০৯৯২৫) এবং আবুল হাসান টিপুর আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুমনের (০১৭৫৯০৬৬৮১৫) মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় বাবু বলেন, “আমাকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান টিপু ভাই, ২২/১১/২০২৩ তারিখে দুপুর ১২টার পর তার সাথে দেখা করতে বলেছে আ/গুনে পোড়ানো ও ভাং/চুরের খরচ মেটাতে।
আলোচনায় বাবু আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের ভালো প্রস্তুতি ছিল। তবে পুলিশের তৎপরতার কারণে কাজটি করতে পারিনি। যেখানেই গেছি, সেখানেই পুলিশ ছিল।
সুমন বলল, “যেভাবেই হোক একটা কাজ (গাড়িতে অ/গ্নিসংযোগ) সফলভাবে করতে হবে।” অন্যথায়, আপনি একটি ভাল পদ পদ পাবেন না। আমি এক বা দুই দিনের মধ্যে সফলভাবে একটি কাজ (গাড়িতে আগুন লাগানো) করব। পুলিশকে এড়াতে আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে।
পরিকল্পনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘একটি টেকনিক্যাল টেকনিক্যাল, একটি কল্যাণপুরে এবং একটি হাউজিংয়ের ভিতরে থাকবে পুলিশের নজরদারি করার জন্য। বাবু একজন বাইকে করে গাবতলী ব্রিজের দিকে যাবে। সুমন কিছু লোক নিয়ে সেতুর চারপাশে গাড়িতে আ/গুন ধরিয়ে দেবে। কেউ এলে লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। পুলিশের তৎপরতায় এবার কাজ করতে না পারলে কিছু ভবঘুরে দিয়ে কাজটা করতে হবে।
এ কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে রোববার বিকেলে সুমনকে ফোন করলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘হ্যাঁ, এমন কথোপকথন হয়েছে বাবুর সঙ্গে।’
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার সাজানো নাটক। সরকার বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ভুয়া ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ আইডি তৈরি করে নানা অপপ্রচার চালায়। বিএনপির চলমান আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে সংগঠনগুলো এসব করছে। এমনকি দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে সংগঠনের পক্ষ থেকে অমানবিক নি/র্যাতনের পাশাপাশি প্রাণনাশের হু/মকি দিয়ে বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়, যা পরে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
তিনি আরও বলেন, যেসব নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন ধরে নি/র্যাতিত-নিপীড়ন শিকার হয়েছেন এবং যারা খু/ন, গু/ম ও হ/ত্যার শিকার, তারা কখনোই দলের কোনো সিদ্ধান্ত অন্যদের কাছে পাঠাবেন না। প্রকৃত নেতাকর্মীরা এসবের সঙ্গে জড়িত নয়।