সম্প্রতি সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হ/ত্যাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। যদিও এই ঘটনার বাদি হয়ে মামলা করে ছিলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে তদন্ত করতে যেয়ে স্ত্রীর হ/ত্যার সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য মিলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই মামলার তদন্ত শেষে পিবিআই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তদন্তে তার সম্পৃক্ত প্রমাণ মেলায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে বাবুল আক্তার কর্মকান্ড প্রসঙ্গে যে তথ্য বেরিয়ে এলো।
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হ/ত্যায় ফেঁসে যাচ্ছেন। তিন লাখ টাকা দিয়ে কিলিং মিশন সফল করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে এ তথ্য। বিষয়টি বুঝতে পেরেই মিতু হ/ত্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন কারান্তরীণ বাবুল আক্তার।
পিবিআই বলছে, পরকীয়ার জেরে পারিবারিক কলহে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বাবুল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদা খান মিতু হ/ত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারসহ ৭ জন আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ১০ অক্টোবর মামলার শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।
স্ত্রী হ/ত্যায় সর্বোচ্চ সাজা থেকে বাঁচতে এবং বিচারকাজে কালক্ষেপণ করতে বাবুল আক্তার পিবিআই প্রধানসহ দায়িত্বশীল ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করে মূল ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করছে পিবিআই।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বাবুল আক্তারের পক্ষে দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে ।
এদিকে ফেনী কারাগারে বাবুল আক্তারের কক্ষে ওসি নিজাম উদ্দিনের তল্লাশির অভিযোগ, সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে এবং পিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ এনে পুলিশ প্রধানের কাছে গত মাসে বাবুলের পরিবার আবেদন করার মাধ্যমে মিতু হ/ত্যাকাণ্ডে তদন্তের মোড় ঘুরাতে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও।
তারা বলছেন, পিবিআই প্রধানসহ এতোজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে বাবুলের কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না। তদন্তে স্ত্রী হ/ত্যায় প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়ার কারণেই সাবেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলকে ছাড় দেওয়া হয়নি। সেজন্য তিনি সময় নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হ/ত্যায় আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাবুলকে নিয়ে বেশ কয়েকজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বাবুলের। হ/ত্যাকাণ্ডের পর জব্দ করা উপহারের বইয়ে হাতের লেখা ও বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে সিআইডি। মিতুর বাবা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনও দাবি করেছেন যে বাবুল আক্তারের সাথে কক্সবাজার জেলায় কাজ করার সময় ইউএনএইচসিআর-এ ফিল্ড অফিসার (সুরক্ষা) হিসাবে কর্মরত ভারতীয় মহিলা গায়ত্রী অমর সিংয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। প্রতিবাদ করায় মিতুকে শারীরিক ও মানসিক নি/র্যাতন করতেন বাবুল আক্তার। বিষয়টি মিতু তাকে (বাবা) জানান। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, “সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তদন্তে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের আসামি করা হয়েছে।বাবুল আক্তার কিভাবে হ/ত্যাকাণ্ডে জড়িত তার তথ্য প্রমাণ পেয়েই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। পিবিআই কখনও পেশাদারিত্বের বাইরে যায়নি। আড়াই বছর তদন্ত শেষে সব রকমের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে’।
মহানগর পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোঃ ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, বাবুল আক্তারের পক্ষে দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে কি না সে বিষয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলায় সুবিধা পাওয়ার জন্য আসামিপক্ষ নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে পারে। মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও তেমনই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে তদন্ত কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।
বাবুল আক্তারকে চতুর আখ্যা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘তিনি একজন চতুর ব্যক্তি। তদন্তের বাইরে আমরা কিছু করতে পারব না। তদন্ত যেন সঠিকভাবে হয় সেটা আমরা দেখবো। বাবুল আক্তার যে কথা বলেছেন, সেগুলো বাস্তবসম্মত কি-না সেটা তদন্ত হলেই বুঝা যাবে। পিবিআইয়ের ওপর আমাদের ভরসা রয়েছে। পিবিআই যতগুলো অনুসন্ধান করেছে সবগুলোই বাস্তবসম্মত এবং অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তারা অনুসন্ধান করেছে’।
প্রসঙ্গত, এ মামলায় সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ যার কারনে বাবুল আক্তার ভিন্ন কৌশলে বাঁচার চেষ্টা করতে বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে পুরিশের পক্ষ থেকে। আইনের লোক হওয়ায় বিভিন্ন ফাঁকফোকর জানা্ আছে তার।