Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে উদ্বেগ জানাল যুক্তরাষ্ট্র, জানা গেল কারণ

এবার বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে উদ্বেগ জানাল যুক্তরাষ্ট্র, জানা গেল কারণ

প্রতি বছর বাংলাদেশের পোশাক কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। যেখান থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে। এবার বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া কাপড়ের মান নিয়ে অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ বিষয়টি দেশের পোশাক খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলিস্তানের একটি বহুতল মার্কেটের ৬ ও ৭ তলায় বিভিন্ন দোকানে বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টসের পোশাক দেখা যায়। যা দেশের বিভিন্ন পোশাক থেকে আনা হয়। যেখানে রয়েছে ছোট-খাটো থেকে অনেকে পরিচিত সব বিখ্যাত ব্র্যান্ড।

রপ্তানির জন্য তৈরি একটি পণ্য অর্ডার বাতিল হলে বা ত্রুটির কারণে রপ্তানি সম্ভব না হলে কম দামে বিক্রি করা হয়। এসব দোকানের মালিকরা সেসব কাপড় কিনেছেন। যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। আর এই ব্যবসাকে সাধারণত ‘স্টক লট’ বলা হয়।

খালেক মন্ডল নামে এক দোকানি জানান, কারখানা থেকে এসব কাপড় আনা হলে ব্র্যান্ডের নাম ও ট্যাগ খুলে ফেলা হয়। যাতে কোম্পানির নাম বা পরিচিতি বোঝা না যায়।

‘স্টক লট’ নিয়ম অনুযায়ী কারখানার ভেতরেই ধ্বং/স করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। যার প্রমাণ সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত কাপড়ের বাণিজ্য।

অভিযোগ, বাতিলকৃত অর্ডারের কিছু অংশ উন্নত মানের, যা কেউ কেউ দেশের বাইরে রপ্তানি করছে। আর বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ড বলছে নকল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। সম্প্রতি এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় ইউএসটিআর-এর এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ থেকে নকল কাপড় রপ্তানির বিষয়টি উঠে এসেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, নকল পোশাকের বৈশ্বিক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষ ৫টি উৎস দেশের একটি।

বাংলাদেশে তৈরি নকল কাপড় নিয়ে ইউএসটিআর সংস্থার কাছে অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডের সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। বাংলাদেশ থেকে নকল পণ্যের চালান বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১২টি দেশে নকল কাপড়ের চালান ধরা পড়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে এসব পোশাক রপ্তানি ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশকে নজরদারির তালিকায় শীর্ষে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

এএএফএ সংস্থা বলছে যে ২০২২ সালে, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনে ১৭ টি অপারেশনে ১৭৫০০০ নকল পণ্য জব্দ করা হয়েছিল। এসব পোশাকের বেশির ভাগই বাংলাদেশে তৈরি হয়। এই পণ্যগুলি প্রচলিত সমুদ্রপথে পাঠানোর পরিবর্তে ডাক পরিষেবার মাধ্যমে অল্প পরিমাণে পাঠানো হয়।

এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমই) জানিয়েছে, তারা তাদের কোনো কারখানা থেকে নকল পণ্য রপ্তানি করে না। বিজিএমই দাবি করেছে, অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নকল পোশাক রপ্তানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

বিজিএমইএর একজন পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, এক সপ্তাহ আগে ইউএসটিআর গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। নকল পোশাক রপ্তানির বিষয়ে তারা কোনো অভিযোগ করেননি। আর পোশাক মালিকরা কেন নকল পণ্য রপ্তানি করে তাদের সুনাম ও রপ্তানি বাজার ধ্বং/স করবে?

এছাড়া কারখানা থেকে ‘স্টক লট’ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একেবারেই বেআইনি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করে এমন কারখানাগুলি নিয়মিত এটি করে। যদি একটি অর্ডার বাতিল করা হয়, ব্র্যান্ড লেবেল সরানো এবং তাদের অনুমতি নিয়ে বাইরে বিক্রি করা যেতে পারে। এটা বেআইনি নয়। আর এখান থেকে এমন দু-একজন হতে পারে, যারা নিয়ম অনুযায়ী বেরোয়নি।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি স্থানীয়ভাবে নকল পণ্য তৈরি করে তাহলে তার দায় অবশ্যই বিজিএমইএর নয়। কারণ এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অধীনে নয়।

ফয়সাল সামাদ বলেন, নকল কাপড় রপ্তানির বিষয়টি প্রমাণিত হলে কাপড় রপ্তানিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ বা সতর্কতা সাপেক্ষে হতে পারে। সরকারকে এ ব্যাপারে সক্রিয় হতে হবে।

এদিকে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ অব্যাহত থাকলে ব্যবস্থা হিসেবে এ দেশের যেকোনো পণ্যের রপ্তানি পর্যায়ে নানা শর্ত আরোপ করা হতে পারে। অথবা ঐসব দেশে প্রবেশের সময় চেক করার সময় বাড়ানো হতে পারে। আর যদি নকল পণ্যের রপ্তানি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরিমাণ খুব বেশি হয়, তাহলে কোটা আরোপ, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলো যুক্ত হতে পারে।

বাণিজ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বর্তমানে দেশের বাইরে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

About Babu

Check Also

ভারতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ফাঁস, বন্দিদের ভারতে পাঠাতেন শেখ হাসিনা

ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *