Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার বাংলাদেশের নিকট মালদ্বীপের আবেদন, চলছে পর্যালোচনা

এবার বাংলাদেশের নিকট মালদ্বীপের আবেদন, চলছে পর্যালোচনা

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় একদম শীর্ষে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। যার কারনে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমান অনেক বেড়ে গেছে। বাংলদেশের উন্নয়নে বিশ্বের অনেক দেশ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা জানিয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এক সময় উন্নত রাস্ট্রে পরিনত হবে এমনটাই আশা করছেন বর্তমান সরকার এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি উন্নত রাস্ট্র হিসেবে উন্নিত করার জন্য বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা ঘ্রহন করছে সরকার, যার মধ্যে অন্যতম হলো ছোট ছোট শিল্পগুলো যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে সেই বিষয়ে নানা ধরনের পদক্ষেপ, দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি করাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ। বাংলাদেশের একটি বড় অঙ্কের অর্থের রিজার্ভ থেকে ইতিমধ্যে ঋন নিতে শুরু করেছে কয়েকটি দেশ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা ঋন নিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার পর এবার প্রতিবেশী আরেক রাষ্ট্র মালদ্বীপ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার আবেদন করেছে। তারা নিজেদের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মালদ্বীপের এই আবেদন পর্যালোচনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রিজার্ভ থেকে মালদ্বীপকে কত ঋণ দেওয়া হবে এটি চূড়ান্ত হয়নি। তারা প্রথমে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়ে আবেদন করেছিল; এরপর আবার ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে দেখছে।

এর আগে গত বছর প্রথমবারের মতো দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে রিজার্ভ থেকে ডলারে ঋণ সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাপী চলামান পরিস্থিতির কারণে দেশটির পর্যটন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে রিজার্ভে টান পড়ে। এক পর্যায়ে দ্বীপরাষ্ট্রটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসে ৫০০ মিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এত বেশি তীব্র হয়ে যায় যে, ২০২০ সালের মার্চে আমদানির ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে শ্রীলঙ্কান সরকার। এ অবস্থায় মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে গত বছরের ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সেই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলারে ঋণ নিতে আবেদন করেন। শেষে শর্তসাপেক্ষে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়া হয় বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করলেও এক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত লাগে। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়ার আগে এ বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বর্তমানে আরেক দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের সঙ্গেও বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি মালদ্বীপ সরকারের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে মালদ্বীপের আবেদন ইতিবাচকভাবে দেখছে সরকার।

যে শর্তে ঋণ পেতে পারে মালদ্বীপ : বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মালদ্বীপ যেহেতু শ্রীলঙ্কার সমপরিমাণ ঋণ নিতে চাইছে, সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে যেসব শর্তে ঋণ দেওয়া হয়েছে মালদ্বীপের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই ধরনের শর্ত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কারেন্সি সোয়াব পদ্ধতিতেই লেনদেন করা হবে। জানা গেছে, সোয়াবের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে পড়লে এর আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারে। স্বল্পমেয়াদি এই ঋণ প্রথমে দেওয়া হয় তিন মাসের জন্য। পরে এর মেয়াদ দুই পক্ষের সম্মতিতে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সাধারণত লন্ডন আন্তব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) সঙ্গে ২ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়। তবে এটি দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার ঋণ আবেদনে অনুমোদন দেওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথমে চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণ ডলার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে পাঠায়। দ্বীপরাষ্ট্রটি আগে থেকেই উল্লেখিত ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জামানত হিসেবে বাংলাদেশের নামে নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে জমা রাখে। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কা ওই অ্যাকাউন্টে মার্কিন ডলার জমা দিয়ে ক্রমান্বয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করবে। আর পরিশোধ করতে না পারলে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ কোটি ডলার মূল্যের যে পণ্য শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করে তার মূল্য পরিশোধ করা হবে ওই অ্যাকাউন্টে জমা থাকা শ্রীলঙ্কান মুদ্রা দিয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মালদ্বীপকে রিজার্ভ থেকে ডলারে ঋণ দেওয়া হলে একইভাবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা জমা রাখতে হবে।

কত রিজার্ভ আছে বাংলাদেশের : বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৯ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত আগস্টে প্রথমবারের মতো রেকর্ড পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। ওই সময়ে আইএমএফের একটি ঋণ ছাড় হওয়ায় রিজার্ভে এই উল্লম্ফন ঘটে। তবে বছর শেষে সেটি ২ বিলিয়ন ডলার কমে এখন ৪৬ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১১ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মজুদ থাকলে সেটিকে নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নিরাপদ এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণেই প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের কাছ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার আবেদন করছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য পাওয়া একটি দেশ। বাংলাদেশের জন্মের পরপরই বাংলাদেশকে তলা বিহীন ঝুড়ি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ইউরাল অ্যালেক্সিস জনসন, এই সময় দেশটি প্রায় অপ্রতিরোধ্য চ্যা’লেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি সহ বাংলাদেশ এখন ২৫৫৪ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় সহ বিশ্বের ৩৭ তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যতা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি উচ্চ মাঝারি আয়ের দেশের মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জনের করার লক্ষ্যে রয়েছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি মূলত প্রস্তুত পোশাক রপ্তানি এবং বিদেশী রেমিটেন্স দ্বারা চালিত হয়েছে।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *