বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনীতি এখন একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করার জন্য ভূ-রাজনীতি শুরু করে থাকে। এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছ. এদিকে তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে আসছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থপন করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে তাইওয়ান। এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাছে টানতে চীন সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
চীনের স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তার ১৯ ঘণ্টার সফরে ঢাকাকে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক খেলার কৌশল হলো প্রথমে সমস্যা তৈরি করা; তারপর নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে। আমেরিকা এশিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এড়িয়ে চলতে হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওয়াং ই গত শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। পরদিন সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ‘এক চীন’ নীতির প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ওয়াং ই এর ঢাকা সফরের সময় তাইওয়ানের বিষয়ে যে বার্তা দিয়েছেন তা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ওয়াং ইং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিত্তিহীন যুক্তির’ দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরে যুক্তরাষ্ট্র তিনটি বড় ভুল করেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। চীনের বারবার পরামর্শ ও সতর্কতা উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র তার তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তির তাইওয়ানে সফরের আয়োজন করেছে।
ওয়াং ই বলেন, তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ড, মার্কিন ভূখণ্ড নয়। মার্কিন পক্ষ নিজেই এই বিষয়ে একটি প্রকাশ্য অঙ্গীকার করেছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা চীনের সার্বভৌমত্বের গুরুতর লঙ্ঘন।
‘যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ভুল’ উল্লেখ করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বাহিনী’কে সমর্থন করেছে। যেকোনো দেশ তার জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে বেপরোয়া কাজ করতে দেয় না।
ওয়াং ই বলেন, তাইওয়ান অঞ্চলের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি তাদের দলীয় কর্মসূচিতে “স্বাধীনতার” সম্ভাবনাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এটি ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ এবং ‘দুই চীনের’ বা ‘এক চীন, এক তাইওয়ান’-এর মতো মিথ্যা ধারণা তৈরি করার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ের চেষ্টা করেছে।
ওয়াং ই বলেন, মার্কিন স্পিকার প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে চীনা জনগণের শত্রুতে পরিণত করেছেন।
‘যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় ভুল’ প্রসঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে তাইওয়ান প্রণালী জুড়ে শান্তি নষ্ট করেছে। মার্কিন গেমটি হল প্রথমে একটি সমস্যা তৈরি করা এবং তারপর সেই সমস্যাটিকে তার নিজস্ব কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ব্যবহার করা।
চীন বিশ্বাস করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পুরোনো কৌশলের ধারাবাহিকতায় ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের আয়োজন করেছে। ওয়াং ই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার সুযোগ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সব দিক থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছিলেন যে আদর্শ নিয়ম হল অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে তা লঙ্ঘন করেছে। ওয়াং ই এসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের ওপর জোর দেন।
এর আগে এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, কোয়াড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত চার-দেশীয় নিরাপত্তা জোট নিয়ে চীনের উদ্বেগ রয়েছে। বেইজিং এরই মধ্যে ঢাকাকে সতর্ক করেছে যে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিস্তৃত হলে কোয়াডে যোগ দিলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ঢাকাকে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক করেছে চীন। এর আগে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনটাই জানিয়েছিল চীন। এদিক থেকে অনেকটা ষ্পষ্ট চীন বাংলাদেশকে তার পাশে রাখতে সচেষ্ট। অন্যদিকে বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরে বাংলাদেশকে চীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরোক্ষ বার্তা দিয়েছে দেশটি।