দু/র্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দলের বাইরে থাকা শতাধিক নেতার তালিকা লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তার অনুমতি সাপেক্ষে বহিষ্কৃত নেতাদের পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিনের কাজের অংশ হিসেবে দলের বহিষ্কৃত ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একাধিক তল্লাশির ঘটনায় অনেক তথ্য হাতছাড়া হয়েছে। তাই সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। বহিষ্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে এনে দলকে শক্তিশালী করতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনায় ২০০৮-১৮ সাল পর্যন্ত বহিষ্কৃত নেতাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর নেতৃত্বে এ কাজ চলছে।
শতাধিক বহিষ্কৃত নেতার নামের তালিকা লন্ডনে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। দুই-এক দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হবে। নাম, উপাধি, ঠিকানা, বহিষ্কারের কারণ এবং বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া ব্যক্তির নাম এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
এ তালিকায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ হান্নানের নাম রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুন অর রশিদের আপত্তির মুখে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। ২০১৪ সালের ২১শে মার্চ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিন্দ্রসহ বিএনপি নেতাসহ আমিন শরীফকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তাদের বহিষ্কার আদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। ২০১২ সালের ২৬ অক্টোবর নাটোর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, আব্দুল মান্নান, নগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ডিউক ও জেলা কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা নয়নকে বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১২ নভেম্বর খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের ২১ নেতার নামে মামলাও করেন তারা। ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারকে ১৫ জুলাই ২০১৭ বহিষ্কার করা হয়। জাসা কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে জড়িত নেতাদের বাধার কারণে তাকে দলে ফেরানো যাচ্ছে না। পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিনবারের পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুকে ২০০৯ সালে বহিষ্কার করা হয়। খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বিরাগভাজন কারনে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। রাজশাহীর উপজেলা বিএনপি নেতা হযরত আলীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
একইভাবে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির রফিকুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ, আজগর আলী, ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ রানা খান, টাঙ্গাইল বাসাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল করিম অটল, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কেএমআই খলিলসহ অনেক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের অনেকেই প্রভাবশালী নেতাদের দাপটে বহিষ্কৃত হয়েছেন। দেনদরবার, লবিং ও লিখিত আবেদন জমা দিলেও বিগত দিনে দলে ফিরতে পারেননি তারা। বিভিন্ন সময়ে চেয়ারপারসন ও মহাসচি বরাবর আবেদন করলেও বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরার হয়নি। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক দফা তল্লাশির সময় ওই আবেদনগুলো হারিয়ে যায়। তাই বহিষ্কৃত নেতাদের নতুন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে দলের প্রতি অবজ্ঞার কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া নেতাদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন নেতাদের নামের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। আশি ও নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি তালিকায় আছে ১/১১-এর সংস্কারপন্থী নেতাদের নামও। তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।