Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের বক্তব্যে কিসের ইঙ্গিত জানালো বিশিষ্টজনেরা

এবার বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের বক্তব্যে কিসের ইঙ্গিত জানালো বিশিষ্টজনেরা

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রভাব যেতে না যেতে নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারন মানুষ দিশেহারা। এমনিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগাহীন বৃদ্ধি অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপর হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মরার উপর খাঁড়ায় ঘা। অপর দিকে সরকারের দায়্ত্বিশীল মন্ত্রী-এমপিদের বেফাঁস মন্তব্য ও দায়্ত্বিজ্ঞীন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এমন পরিস্থিতে তাদের বক্তব্য গুলো কিসের বার্তা দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি দেশের সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দামই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা।

এমন পরিস্থিতিতেও সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করব না। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখনো কেউ মা/রা যায়নি। আশা করি ম/রবেও না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘দারিদ্র্যের সঙ্গে যু/দ্ধ করে আমরা এখানে এসেছি। ভবিষ্যতে আমাদের প্রজন্মের মতো মানুষদের (দারিদ্র্য) দেখতে যাদুঘরে যেতে হবে।’ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ”কেবল দেশ বদলে যায়নি। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। ছেঁড়া কাপড় পরা কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? না। আপনারা খালি পায়ের কাউকে দেখতে পান? পান না। উপর থেকে কোনো কুঁড়েঘর দেখতে পান? না।’।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। প্রতিটি গ্রামে ও শহরে…কেউ না খেয়ে যায় না। আল্লাহর রহমতে সবাই খেতে পারছে। সবার গায়ে জামা-কাপড় আছে।’

মন্ত্রীদের এসব কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও দলের নেতা-কর্মীদের দায়িত্বহীন কথা বলা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

লমান পরিস্থিতিতেও কয়েকজন মন্ত্রী যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা কী বার্তা দেয়? জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দেশের একটি অন্যতম সংবাদমাধ্যকে বলেন, ‘মন্ত্রী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ লুটেরা ধনী শ্রেণির যারা আছে, তারা যাতে ভালো থাকে, সেটা ছাড়া সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। সেটাই বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। এরকম একটা দুর্ভোগের সময় যারা এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্য করতে পারে, তাদের বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা নিষ্প্রয়োজন। তাদের হাত থেকে দেশবাসীকে উদ্ধার পেতে হবে। ক্ষমতায় আসার পর যাদের আচরণ এমন হয়, তাদের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া ছাড়া জনগণের দুর্ভোগ দূর হবে না।’

ভারতের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়ে কম উল্লেখ করে এই সিপিবি নেতা বলেন, ‘যাদের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে কম তারা যদি গরীবদের রেশন দিতে পারে, তাহলে আমরা কেন এখানকার দরিদ্রদের কম দামে রেশন দিচ্ছে না? তা তো করছেই না, সাধারণ মানুষকে এমন যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে এমন ঠাট্টা-তামাশা করছেন, দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। বাঁচতে হলে জনগণকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার পেতে হবে।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের দেশের একটি অন্যতম সংবাদমাধ্যকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার জনবান্ধব নয়। এই সরকার জনগণের কষ্ট বুঝতে চায় না। সাধারণ মানুষের দুঃখে দুঃখী হওয়ার মানসিকতা তাদের মধ্যে নেই। তাদের অভিব্যক্তি খুব নির্দয় বলে মনে হয়। মানুষের কষ্টে তারা সহানুভূতি বা দয়া তাদের মনে আসে না। তারা নিজেরা ভালো আছে, এতে মনে করে যে সবাই ভালো আছে বা অন্যরা ভালো না থাকলেও তাদের কিছু যায় আসে না। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সরকার চলছে।’

এমন মানসিকতাকে অত্যন্ত অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের (মন্ত্রীদের) মানবিক গুণাবলী থাকলে এমন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রতি সহানুভূতি থাকত। তারা মনে ব্যথা অনুভব করতেন যে হয়তো তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তাদের আরও চেষ্টা করা উচিত। তাদের মধ্যে এমন মনোভাব থাকা উচিত ছিল।’

মন্ত্রীদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া দেশের একটি অন্যতম সংবাদমাধ্যকে বলেন, “সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। ফলে জনগণের বিষয় নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। চলমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের মন্তব্য থেকে এমন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। মন্ত্রী-আওয়ামী লীগাররা তো কোনো কষ্ট পাচ্ছেন না। কিন্তু জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে, তা নিয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই।’

মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এটা নিশ্চিত। মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে যাবে। এটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বা সদিচ্ছা সরকারের নেই।’

তিনি বলেন, “সরকারকে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না বলে তারা জনগণের দিকে নজর দিচ্ছে না। তারা পুলিশের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। তাই জনগণ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এজন্যই তারা অদ্ভুত কথা বলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ দেশের একটি অন্যতম সংবাদমাধ্যকে বলেন, “দলের সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি দলের সবাইকে সংযত হয়ে কথা বলতে এবং অপ্রয়োজনীয় কথা না বলার জন্য বলেছেন। তাই এ বিষয়ে আর কিছু বলব না।’

প্রসঙ্গত, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারন জনগণ ব্যাপক কষ্টের মধ্যে আছে। অথচ জনগনের পাশে না দাড়িয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী-এমপিরা দায়িত্বজ্ঞীন বক্তব্যের দিয়েই চলেছেন বলে সমালোচনা করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

About Babu

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *