বরগুনায় রিফাত শরীফের ঘটনা অনেকেই জানেন, যেখানে তার স্ত্রী তার হ”/ত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আলোচনায় উঠে আসেন। বর্তমানে মিন্নি তার স্বামীর ঘটনায় মৃ”/ত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। এবার মিন্নির আরেক রূপ দেখা গেছে সৌরভ বেপারীর স্ত্রী রাবেয়া আক্তার মুসকানের মধ্যে। এই ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার একটি এলাকায়। স্বামীকে সারা জীবনের জন্য নিথর করে দিতে চেতনানা”শক ওষুধ খাওয়ায় মুসকান। এরপর তিনি তার প্রেমিক ও ভাড়াটে সন্ত্রা”/সীদের দিয়ে তাকে কুপিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন তার স্ত্রী। আহ”ত সৌরভ বেপারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাবেয়া আক্তার মুসকান তার উচ্চাভিলাষী আকাঙ্খার বিপরীতে তার স্বামীর আর্থিক অবস্থা পছন্দ না হওয়ায় তার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার প্রেমিকের সাথে চলে যাওয়ার জন্য এই ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাবেয়া আক্তার মুসকান, তার প্রেমিক আবু সাইদ সিয়াম, সহযোগী জিহাদ হাসান, রায়হানকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফ”তারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, সাড়ে চার মাস আগে সৌরভ বেপারীর সঙ্গে রাবেয়া আক্তার মুসকানের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে সৌরভ বেপারী নিজেকে সরকারি চাকরিজীবী দাবি করলেও মুসকান জানতে পারেন তিনি ঢাকার একটি কোম্পানিতে চালক হিসেবে কাজ করছেন। পরে, মুসকান তার স্বামীকে তালাক দেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং তার প্রাক্তন প্রেমিক আবু সাঈদ সিয়ামকে জানায়। মুসকান তার প্রেমিকের সাথে তার স্বামীকে মা”রধর ও ভয় দেখিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিকল্পনা করে।
এদিকে গত ২৪ জানুয়ারি ছুটিতে সৌরভ ঢাকা থেকে বাসায় আসলে মুসকান তার প্রেমিক সিয়ামকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সহযোগী ও অ”/স্ত্র নিয়ে গৌরনদীতে আসতে বলে। ২৫ জানুয়ারি দুপুরের খাবারের পর স্বামীকে ভিটামিন ওষুধ বলে দুটি চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেন। এরপর স্বামীর সঙ্গে পার্লারে ও গৌরনদী বাজারে কেনাকাটা করতে যান। পার্লারে ঢোকার সময় মুসকান তার স্বামীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় এবং তার প্রেমিককে ঘটনাস্থলে এসে তাদের অনুসরণ করতে বলে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সৌরভ বেপারী অসুস্থ হয়ে পড়লে দুজন অটোরিকশায় করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে মুসকান গাড়ি থেকে নেমে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা বলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কালনা এলাকার শামসুল হকের বাড়ির পূর্ব পাশে পৌঁছালে মুসকানের প্রেমিক সিয়াম ও তার সহযোগীরা ধারালো অ”/স্ত্র নিয়ে সৌরভের ওপর হা”/মলা চালায়। চেতনানা”/শক ওষুধ খাওয়ানো স্বামীকে অসুস্থ অবস্থায় যখন কো”/পানো হচ্ছিল তখন মুসকান পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হাম”/লাকারীরা পা”লিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, পরিকল্পনাকারী ও হাম”/লাকারীরা সবাই পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রথমে হা”/মলাকারীকে শনাক্ত করা যায়নি। আহ”/ত সৌরভ এতটাই গুরুতর অবস্থায় ছিলেন যে তার কাছ থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সৌরভের বিষয়ে রহ”স্যজনক আচরণ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ায় তার স্ত্রী মুসকানকে সন্দেহ করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে পুরো পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে তাকেসহ দুইজনকে এবং সর্বশেষ গতকাল (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে দুইজনকে গ্রে”প্তার করা হয়। গ্রে’প্তারের পর জানা যায়, খু”/নিরা সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
পুলিশ সুপার বলেন, গৃহবধূর উচ্চাভিলাষী মানসিকতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সৌরভ এখন বেঁচে আছেন, না হলে বরগুনায় মিন্নির ঘটনার মতো সমান্তরাল ঘটনার সৃষ্টি হতো। পুরো বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পনা মতোই হয়েছে। স্বামীকে নিথর করে প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন মুসকান।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, স্বামীকে দুর্বল করার জন্য প্রথমে তাকে চেতনানা”/শক দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী হাম”/লাকারীদের ঢাকা থেকে আনা হয়েছিল। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে প্রাণে মে”/রে ফেলা করা। সৃষ্টিকর্তার রহমতে বেঁচে গেছেন সৌরভ। গ্রেফ”তারকৃতদের আমরা আদালতে সোপর্দ করেছি। তারা আমাদের কাছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মুসকানের প্রেমিক আবু সাঈদ সিয়াম বলেন, মুসকানের স্বামীকে কো”/পানোর জন্য জন্য ঢাকা থেকে আমাকে আনা হয়। মুসকানের নির্দেশে আমরা তার স্বামীকে কু”/পিয়ে আহ”ত করেছি। সেও চেয়েছিল যেন কু”/পিয়ে সৌরভকে হ”/ত্যা করি। এজন্য প্রথমে কু”/পিয়ে জখ”/ম করার পর আমাকে আবারো কো”/পাতে বলে। কিন্তু ততক্ষণে লোকজন এসে পড়ায় আমরা পা”/লিয়ে যেতে বাধ্য হই।
মুসকানের একটি ভিডিও স্বীকারোক্তিতে, তাকে পুরো পরিকল্পনাটি বর্ণনা করতে দেখা যায়। মুসকান বলেন, আমি মা”/রতে বলিনি। আমি ভ”য় দেখানোর জন্য বলেছিল, যাতে আমাকে ডিভোর্স দেয়।
আহ”/ত হওয়া সৌরভের বাবা ঘটনার বিষয়ে কবির বেপারী ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন, আমার ছেলের সাথে ওই মেয়ের সাড়ে ৪ মাস আগে বিয়ে দেওয়া হয়। আমি কখনো তার শ্বশুরবাড়ির লোকদেরকে এটা জানাইনি যে, আমার ছেলে সরকারি চাকরিতে কর্মরত। আমি তাদেরকে বলেছি যে, গাড়ির ড্রাইভার। আমার ছেলেকে যে এইভাবে আমারই পূত্রবধূ হ”/ত্যা করার পরিকল্পনা করেছে, সেটা কেউ ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমি যখন আমার আহ”/ত হওয়া ছেলের কাছে গিয়েছিলাম, তখন পুত্রবধূর মধ্যে ভিন্ন ধরনের আচরণ লক্ষ্য করেছিলাম। সেখান থেকে আমার সন্দেহ হয় যে, আমার পুত্রবধূ এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তিনি আরো দাবি করেন, আমার নির্দোষ ছেলেকে নিথর করার বড় ধরনের পরিকল্পনা করেছিল। এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।