নুরুল হোক নূর, বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি নাম এটি। ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তার নামটি আলোচনায় আসে সারা দেশে। এরপর থেকে পেরিয়ে গেছে অনেক সময়। তিনি খুলেছেন একটি রাজনৈতিক দলও। তবে এবার জানা গেলো নতুন খবর।গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। সাইবারস্পেসে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায়ে তার বিচার চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে তার শেয়ার করা ভিডিওগুলোর তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, সম্প্রতি কাতারে গেছেন নূর। এরপর তিনি দুবাই যান। সেখানে তার পরিচয় হয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে, যিনি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এরপর তিনি ফেসবুক লাইভে এসে নানা উসকানিমূলক কথা বলেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই থেকে সৌদি আরব গেছেন। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করেন।
তার ফেসবুক লাইভ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুবাই থেকে জেদ্দা যাওয়ার পথে নূর তার ফেসবুক পেজে লাইভে গিয়ে ২৯ ডিসেম্বর বিমানবন্দরে একটি ভিডিও বার্তা দেন। ১৮ মিনিটের ওই ফেসবুক লাইভে নূরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। সরকারের এমপি, মন্ত্রী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দুবাই সফরের কথা উল্লেখ করে নূর ফেসবুক লাইভে দাবি করেন, “এই সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা দুবাইতে কালো টাকা বিনিয়োগ করে সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন।”
একজন মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘তার কয়েক হাজার কোটি টাকা এখানে ইনভেস্ট রয়েছে।
আমি এক জায়গায় একই রঙ এবং একই ডিজাইনের বিল্ডিং দেখেছি। ভিডিও আছে, নথি আছে। বিস্তারিত নথি প্রকাশ করা হবে. নূরের দাবি, এরকম অনেকেই আছেন যারা অবৈধভাবে টাকা বিনিয়োগ করে হোটেল-শপিংমল বানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি ২০ জনের তথ্য পেয়েছি। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তাদের নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। ইতিমধ্যে তাদের ভিত নড়ে গেছে। যাতে গণআন্দোলন শুরু হলে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে।”
এদিকে নূরের মিথ্যা তথ্যে ভরা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। অনেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর দায়ে তার বিচারও দাবি করেছেন। মোঃ রাসেদুল ইসলাম রাসেল নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, দুবাইতে গিয়ে কেউ জমি কিনতে পারবেন না। নূর যে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তিনি গত ১০ বছরে দুবাইতে থাকেননি। একবার তিনি দুবাই বিমানবন্দরে মাত্র 8 ঘন্টার ট্রানজিটের জন্য ছিলেন। কিন্তু নূর মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই পালিয়ে যাওয়া এক বিতর্কিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে নূরের বৈঠক হয়। এরপর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেন। তা ছাড়া হঠাৎ করে নূরের এমন মিথ্যাচারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এদিকে ভিডিওতে নূরকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘পুলিশকে বলব, আপনারা জনগণের ওপর অত্যাচার করছেন- আপনার ভালো শেষ হবে না। এখন কোথায় বেনজির (সাবেক আইজিপি), কোথায় আজিজ সাহেব?’ ভিডিও বার্তায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করছে এবং গণতন্ত্রকামী জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বাংলাদেশে অত্যাচারীরা অত্যাচার করছে। এখানে ধর্ম-ধর্ম করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভিপি নূর বিদেশে গিয়ে তহবিল সংগ্রহের নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছেন- বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা। ভিডিওতে ভিপি নূরও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আরে ভাই… আমি এদেশে ফান্ড সংগ্রহ করতে এসেছি। লুকানোর কিছু নেই। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমি তহবিল সংগ্রহ করছি। আমরা হিসাব দেব কি করব না সেটা আমাদের ব্যাপার।’ তবে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে নূরের আকস্মিক কথায় তার নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওতে নূরকে দেশের মানুষকে সরকার পতনের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি কাতারে ছিলাম, এখন দুবাই। আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আমার একার জন্য সবকিছু থেমে থাকে না। যতদিন দেশে ছিলাম ততদিন আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে পিছপা হইনি। হামলা মামলা উপেক্ষা করেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এখন যারা দেশে আছেন তারাই করবেন। দেশের বাইরে হলেও মনটা দেশেই।
রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একযোগে কর্মসূচি পালন করে। প্রথম কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন নূর। বিদেশে বসে আন্দোলনের কথা বললেও রাজনৈতিক মহলের অনেকেই ভালোভাবে নেননি।
এমন বক্তব্যের পর নূর দেশে ফিরবেন কি না তা নিয়েও গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানতে নূরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলেও তাকে এসব চ্যানেলে সক্রিয় পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন রোববার বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে গেছেন। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দীর্ঘদিন তিনি বিদেশে যেতে পারেননি। তার পাসপোর্ট আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থান করলেও নুরুল হক নুর সার্বক্ষণিক দলের খোঁজখবর রাখছেন। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরামর্শ দিচ্ছেন। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
বিদেশে অবস্থান করে নুরুল হকের উসকানি ও গুজব ছড়ানোর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে কী পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছেন, কীভাবে এসব তহবিল দেশে আনা হচ্ছে বা আনা হবে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাইবার স্পেসে দেশ, সরকার, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে নূরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এ বিষয় নিয়ে এখনো কিছু বলেননি ভিপি নূর। মূলত গেলো কিছু দিন আগে তার বিদেশ সফর নিয়েই বেঁধেছে এই বিপত্তি। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, সাইবার টহলের অংশ হিসেবে নুরুল হক নূরের বেশ কয়েকটি ভিডিও তাদের নজরে এসেছে। এই ভিডিওগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তবে রোববার বিকেল পর্যন্ত ওই ভিডিওগুলোর বিষয়ে কেউ মামলা করেনি।