তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে শিল্প ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
রোববার (১২ নভেম্বর) পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফারুক হাসান বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে ইপিলিয়ন কারখানায় ৩ জন মা/রা গেছে; যা মোটেও সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের কাছে আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, যারা এই শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।এছাড়া আমাদের শিল্প চালাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন।
রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে প্রবাসী আয় খাতে ধীর গতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত পোশাক শিল্প বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক চাপের মধ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত তখন শিল্প নিয়ে শুরু হয়েছে নানা কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে আমাদের শান্তিপ্রিয় শ্রমিক শ্রেণীকে উসকানি দিয়ে বিক্ষুব্ধ করা হচ্ছে।
মজুরি বাড়ানোর পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মজুরি ঘোষণার পর থেকে অযৌক্তিক দাবিতে বেশ কিছু কারখানায় বেআইনিভাবে ধর্মঘট ও কর্মকর্তাদের মা/রধর করেছে কিছু নাম না জানা অসাধু শ্রমিক।কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাংচুর ও ধ্বং/সযজ্ঞ চালানো হয়। এ পরিস্থিতিতে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে আশুলিয়া, কাশিমপুর, মিরপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার প্রায় ১৩০টি পোশাক কারখানার কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কারখানার সম্পত্তি রক্ষা করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি করেছিলাম তিন হাজার টাকা। ২১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি বৃদ্ধির হার ৩১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করে ৭ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করে। নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী মজুরি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ফারুক হাসান বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের আধিপত্য এমন কিছু এলাকায় কিছুদিন ধরে স্বাভাবিক শ্রমিক পরিস্থিতি নেই। এই শিল্প বর্তমানে একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া মহামারীর ধাক্কা সামলে না ঘুরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যু/দ্ধ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে, ইসরায়েল-হামাস যু/দ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে এবং আমাদের দেশের অর্থনীতি বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য একটি নতুন হু/মকি তৈরি করেছে।
পোশাক শিল্প এই মুহূর্তে কোথায় আছে তারও ধারণা দেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, চলতি বছরের ২০২৩ সালের (পঞ্জিকা বছরের) প্রথম ৯ মাসে মার্কিন বৈশ্বিক পোশাক আমদানির মূল্য ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি প্রায় ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। শুধুমাত্র আগস্টে বাংলাদেশ থেকে মূল্য কমেছে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে কমেছে৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
চলতি বছরের ২০২৩ সালের প্রথম 8 মাসে ইউরোপ থেকে বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে, শুধুমাত্র আগস্ট মাসে ২৬ দশমিক ০৬ শতাংশ কমেছে।
তিনি বলেন, অক্টোবর ২০২২ সালের তুলনায় অক্টোবর ২০২৩ সালে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে পোশাক রপ্তানির কৌশলগত লক্ষ্যের তুলনায় প্রকৃত রপ্তানি কর্মক্ষমতা ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের পোশাকের দাম কমতে শুরু করেছে, যা শিল্পের জন্য একটি নতুন শঙ্কা তৈরি করছে, তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে, পোশাক রপ্তানির দাম বিশ্ববাজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত আগস্টে ৮ দশমিক ০৩ শতাংশ কমেছে। একই মাসে (আগস্ট ২০২৩) বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন বৈশ্বিক কারণে পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বহুগুণ বেড়েছে। ২০১৮ সাল থেকে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। শুধু তাই নয়, উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে আমাদের ক্রেতাদের জন্য তহবিলের ব্যয়ও বেড়েছে, যার চাপ উদ্যোক্তাদের বহন করতে হচ্ছে।