সম্প্রতি ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়ে বরগুনায়। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুলিশ নিয়ন্ত্রনে আনতে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে পুলিশের এমন আচরন নিয়ে কথা বলেন বরগুনা-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। কিন্তু পুলিশের আচারনে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন তিনি এবং বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে বরগুনায় ছাত্রলীগের ওপর লাঠিচার্জ, পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়ে যা বলল জেলা ছাত্রলীগ।
বরগুনায় শোক দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। পুলিশের লাঠিচার্জে সমর্থন জানিয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা।
সোমবার (১৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরানসহ তাদের সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা বলেন, আমরা শোক র্যালি নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করার সময় পেছন থেকে দুর্বৃত্তরা আমাদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর হয়। আমরা আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করছি। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে খবর প্রচার করা হচ্ছে। তবে আমি বলতে চাই, ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা থেকে থাকলেও সে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। আমি জেলা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পেরেছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকলে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জে করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়াও দুইজনকে আটক করা হয়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু উপস্থিত ছিলেন।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতিকৃতিতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তার সমার্থক নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে ফেরার পথে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে আসলে জেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদবঞ্চিত একটি পক্ষ শিল্পকলা একাডেমির ছাদ থেকে ইট পাকটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ দুই পক্ষকে শান্ত করতে পদক্ষেপ নিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমানের ব্যবহৃত গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে শিল্পকলা ও লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অ/স্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থার তৈরি হয়। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শোক র্যালি থেকে ফেরার পথে জেলা শিল্পকলা একাডেমির এলাকায় আসলে শিল্পকলা একাডেমির ছাদ থেকে আমাদের ওপর একটি পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ ওই স্থান থেকে আমাদের সরিয়ে দেয়।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মো. সবুজ মোল্লা বলেন, শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আমরা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গিয়েছি। সেখানে পুলিশ শিল্পকলার গেট আটকিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় তার গ্রুপের অন্তত ১৫ থেকে ২০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম তারেক রহমান জানান, শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ গিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরই মধ্যে শিল্পকলা একাডেমিতে ঢুকে পড়ে একদল। শিল্পকলা একাডেমির দ্বিতীয় তলা থেকে পুলিশের গাড়িতে ইট ছুড়ে মারে।
দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা নগরীর সিরাজ উদ্দিন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৪ জুলাই রাতে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সদ্য ঘোষিত ৩৩ সদস্যের কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিত প্রার্থীরা বিক্ষোভ করে আসছেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের দু-গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ ব্যবস্থা নেই। কিন্তু পুলিশের এমন ব্যবস্থায় বরগুনা ছাত্রলীগ সাধুবাদ জানলেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।