বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করছে পুলিশ বাহিনী। যার জন্য তাদের প্রায় কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। দেশের মানুষের জান-মাল রক্ষার্থে বিরামহীন ভাবে কাজ করতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে তার দায়িত্ব পালন করতে হয় বলে জানান করেন (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ। প্রতি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল মন্তব্য করে যা বললেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমি যখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার হিসেবে যোগদান করি তখন ডিএমপিতে গাড়ি চুরি, ছিনতাই, মাদকের মতো নানা সমস্যা ছিল। তখন প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।
তিনি বলেন, ওই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি তাদের অবদান স্মরণ করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদকে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপিতে তার দীর্ঘ কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। সর্বশেষ আমি ২০১০ সালের অক্টোবরে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১০ বছর অর্থাৎ আমার পেশাগত জীবনের এক তৃতীয়াংশ কর্মরত ছিলাম।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৫ মে হেফাজতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের স/হিংসতা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারাদেশে ৬ হাজার ৯১২টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।
বক্তারা বলেন, পুলিশে আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেসবুক পেজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সন্তানদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করেছে রাজারবাগ পুলিশ বিভাগীয় হাসপাতালে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করে পুলিশের সার্বিক উন্নয়নে আপনার ভূমিকা চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের সময় আপনার নেতৃত্বে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে এক বিরল নজির স্থাপন করেছে। ফলে পুলিশের প্রতি আস্থা বেড়েছে সব মহলে।
আইজিপির বিদায় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ জীবনে কত কিছুই না করতে পারে! আপনি বাংলাদেশ পুলিশকে এত কিছু দিয়েছেন যে তুলনা করার সাহস আমার নেই। যতদিন বাংলাদেশ পুলিশ থাকবে, ততদিন আপনার অভাব অনুভব করবে।
তিনি বলেন, আমরা আপনাকে সবসময় আমাদের মাথায় বটগাছ হিসেবে পেয়েছি। ভালোবেসেছেন, আদর করেছেন, দরকার হলে ধমক দিয়েছেন- কিন্তু দিনশেষে আপনি স্নেহ দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছেন, সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন। শত শত মানুষের আশীর্বাদ পাওয়ার যে ক্ষেত্র আপনি তৈরি করেছেন, সেটি যদি পুলিশ ধরে রাখতে পারে তাহলে সামনে আরও এগিয়ে যাবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও উল্লেখ করেন যে, আপনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি বাহিনী মানুষের ক্যারিয়ারে উপকার করতে পারে।
স্মৃতিচারণ করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) একেএম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (তদন্ত) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রসঙ্গত, পুলিশ বাহিনী আধুনিকায়ন শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার তৈরী ক্ষেত্রে আইজিপির অবদানের কথা তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সময় দায়িত্ব পালনে প্রতিকূলতার কথা শেয়ার করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।