পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে হ”/ত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সেটার জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাওয়ার দাবি বার বার তুলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু পাকিস্তান কোনো একটি কারণে সেই বিষয়টিকে বার বার পাশ কাটিয়ে যায়। ফের পাকিস্তানকে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্যও আহবান জানান।
১৯৭১ সালের গণহ”/ত্যা ও জেনো”/সাইডের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আবারও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানী খারকে এ আহ্বান জানান। শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা কলম্বো সফর করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী গতকাল কলম্বোর গল ফেস গ্রিন-এ যৌথ বাহিনীর মার্চ পাস্ট, ফ্লাই-বাই এবং প্যারাসুট প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ‘স্বাধীনতা কুচকাওয়াজে’ অংশ নেন। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি তার দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সময়োপযোগী সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমএমএম আলী সাবরি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন উভয়েই চলমান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য আলোচনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, পর্যটন এবং বর্ধিত সংযোগের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বিদ্যমান সেক্টরাল সহযোগিতার দ্রুত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বাড়াতে ঢাকা-কলম্বো বিমান ভাড়া কমানোর জন্য শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। তিনি বর্ধিত শিপিং সংযোগের জন্য বাংলাদেশী ফিডার ভেসেলের জন্য অগ্রাধিকার ‘বার্থিং’ এর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমলা রাই পৌডিয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি মুরালিধরন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তারা আসন্ন দ্বিপাক্ষিক সফর ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা দুই দেশের জনগণের স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর জোর দেন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সব মন্ত্রী বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রশংসা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনসহ শ্রীলঙ্কা সফররত বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ মহাসচিব রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী দেশ এবং এই দেশ দুটির মাঝে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের সাথে ভাষা ও ধর্মের মধ্যে তাদের মিল রয়েছে। উভয় দেশই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC) এবং বহু-ক্ষেত্রীয় প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ (BIMSTEC)-এর সদস্য। শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হবে সেই আশা দেশ দুটির।