Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরেও পুলিশে চাকরি হচ্ছে না খুলনার মীমের, কারন জানালেন এসপি

এবার পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরেও পুলিশে চাকরি হচ্ছে না খুলনার মীমের, কারন জানালেন এসপি

পুলিশে নিয়োগের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটাতে মেধা তালিকায় ভালো ফলাফল করে শীর্ষে থাকার পরেও তার জেলায় জমি না থাকার কারনে পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন না খুলনার বাসিন্দা মীম আক্তার। গতকাল (শনিবার) অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে খুলনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় হতে ঐ চাকরী প্রার্থী মীমকে জানানো হয়, খুলনায় তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই এবং সেই সাথে তার দৃষ্টিশক্তি কম থাকার কারনে তাকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মীমের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ডাঃ বাবর আলীর ভাড়া বাসা, যার ঠিকানা রোড নং-১, আবাসিক এলাকা নং-৩, সোনাডাঙ্গা থানা, খুলনা এই ঠিকানায় বসবাস করেন। মীমের বাবা মোঃ রবিউল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী যিনি খুলনার বয়রা ক্রস রোডে অবস্থিত একটি ছোট দোকান ভাড়া নিয়ে লেপ-তোশকের ব্যবসা করেন। বেডিং হাউস নামের তার একটি দোকানও আছে।

মীম আক্তার জানান, সাধারণ নারী কোটায় পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে আবেদনের পর গত ২৫ অক্টোবর খুলনা শিরোমণি পু’লিশ লাইনসে শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। ২৫, ২৬ এবং ২৭ অক্টোবর, আমি তিন দিনের শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এরপর ২৮ অক্টোবর খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমিও সেখানে পাশ করেছি। তারপর আমি মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষাও পাশ করেছি। ফলে মেধা তালিকায় আমি প্রথম ছিলাম।

তিনি আরো বলেন, এরপর খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হয়েছি। তারপর ১২ নভেম্বর রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে। সেখানে ১৩ নভেম্বর সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। তারপর বাড়িতে ফিরে আসি। সেখান থেকে বলা হয়েছিল, পরবর্তীতে ফলাফল জানানো হবে। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। সোনাডাঙ্গা থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও সিটিএসবি থেকে বাড়িতে তদন্তে আসে। তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। তারা বলেছিলেন, ৫ ডিসেম্বর আমাকে জানাবেন। ফোন দিয়ে ৭ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ লাইন্সে ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ডাকা হয়। সেখানে পাঁচ আঙুলের ছাপ দিয়ে এসেছিলাম। সেখান থেকে বলেছিল, পরে জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর থেকে আর কিছুই জানায়নি।

মীম বলেন, যারা ফিঙ্গার দিয়ে এসেছিল তাদের ফোন দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে কিছু না জানানোর কারণে আমি শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ লাইন্সে গিয়েছিলাম। তারা কিছুই জানেন না জানিয়ে এসপি স্যারের সাথে কথা করতে বলেন। এরপর শনিবার খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়েছি। পুলিশ সুপার স্যারকে পাইনি। ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ স্যারের সাথে দেখা হয়েছে। স্যার বলেছেন, তোমার সব ঠিক আছে। তবে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমার চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছি। ভূমিহীন বলে আমার চাকরি হবে না। আমার জন্ম খুলনায়। জন্মসনদও খুলনা সিটি করপোরেশনের।

মীমের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, গত ১৭ মাস ধরে ডা: বাবর আলীর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছি। ১৯৮৮ সাল থেকে এ রোডের আশপাশে বিভিন্নস্থানে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছি। গত ৩২ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রয়েছি এখানে। মেয়ের জন্ম খুলনাতে। এখানে আমার নিজস্ব কোনো জমি নেই। এছাড়া গ্রামের বাড়িতেও আমার নামে কোনো জমি নেই। পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ শেখ এখনো জীবিত আছেন। তার নামেই সব জায়গা-জমি রয়েছে। আমার নামে জমি নেই। তাই ভূমিহীন বলে আমার মেয়ের চাকরিটা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, মেয়ের কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ এসেছিল। তাদের আমি সব ঘটনা খুলে বলেছি। তারপর তারা বলে গেছেন, স্থায়ী ঠিকানা বা জমি না থাকলে আপনার মেয়ের চাকরিটা সম্ভবত হবে না। খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ বলেন, মেয়েটা সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে। তবুও পুলিশের রুলসের কারণে আমরা তাকে নিতে পারছি না। সব দিক দিয়েই যোগ্যতা রয়েছে। তবে আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। এখন সরকার যদি আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করে তবেই একমাত্র সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, আমরা তো ভালো প্রার্থীকে চাই। চান্স পাওয়ার ৭ থেকে ৮টি ধাপ রয়েছে। এসব ধাপে যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ ডিসচার্জ হয়ে যায়। ট্রেনিংয়ে যাওয়া পর্যন্ত যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ বাদ পড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, এখন সুযোগ পাওয়া আপেক্ষিক ব্যাপার। প্রার্থী (মীম) যে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন সেটায় খুলনার ঠিকানা দেওয়া আছে। কিন্তু আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম তার কোনো ঠিকানা নেই। সেই ক্ষেত্রে তিনি তার তথ্য গোপন করেছেন। আমরা যা পেয়েছি সেটা হলো তার বাগেরহাটের একটি ঠিকানা। তাহলে প্রার্থী কেন বাগেরহাট থেকে আবেদন করেননি।

পুলিশ সুপার বলেন, সব বিষয়ের পরও তিনি (মীম) মেডিকেল টেস্টে ফিট পাওয়া যায়নি। তার দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই কম। তিনি চশমা না হলে ভালো দেখতে পারেন না, কম দেখেন। বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল টেস্ট হয়ে থাকে। আমাদের একটি মেডিকেল বোর্ড রয়েছে, যেখান থেকে আমাদের বলা হয় যে, আমরা যে চূড়ান্ত রেজাল্ট পেয়েছি সেটায় সে এই চাকরিতে উপযুক্ত নয়। বটম লাইন হল যে আমরা সবসময় একজন ভাল প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোর চেষ্টা করে থাকি। তাহলে কেন আমরা একজন ভালো প্রার্থীকে বাছাইয়ের মাধ্যমে নিব না।

About

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *