Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার পদ ছাড়া নিয়ে কথা বললেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল

এবার পদ ছাড়া নিয়ে কথা বললেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে, তবে রয়েছে শর্ত। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শতভাগ সহ্য করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে এবার নির্বাচন কমিশনার এবং সুস্থ করার জন্য তিনি যেকোন সময় পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠিত হলে প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে দ্বিধা করবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি চাই সম্প্রীতি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের দিয়ে না হলে যে কাউকে দিয়ে করানোর (নির্বাচন) জন্য যদি আমাকে এই পদ ছেড়ে যেতে হয়, আমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। রিকোয়েস্ট করার আগেই চলে যেতে পারব।

তাই এই ভয় বিএনপি বা অন্য কারো মধ্যে থাকা উচিত নয়।’

রোববার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রথম দিনে সিইসি আরও বলেন, ‘তবে আমরা এই পদে মজা করতে আসিনি। কঠিন দায়িত্ব নিয়ে পরিশ্রম করতে এসেছি। আমি অনেক পরিশ্রম করছি। গতকাল সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয় চারটি দলকে- জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। তাদের মধ্যে দেখা যায়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সদস্য বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। বাকি তিন দলের সঙ্গে সংলাপে অন্তত ছয়বার বক্তব্য দেন সিইসি।

সকালে এনডিএমের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, সব দল সহযোগিতা না করলে ইসি ব্যর্থ হবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘কেউ ত”লোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে রা”ইফেল বা অন্য ত”লোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’

সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, কেউ পি”স্তল নিয়ে মাঠে ঢুকলে আমি শ”টগান নিয়ে মাঠে ঢুকতে পারি না। কারণ আইন আমাকে বাধা দেয়। ভোটকেন্দ্র দখল করলে তা প্রতিহত করতে হবে প্রশাসনকে। প্রশাসনের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিতে হবে ইসিকে। ‘

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল বা তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ানো’ বক্তব্যে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছে। গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দ্বারা সহিং”সতা উ/স’কে দেওয়ার সমান।

পরে বিকেলে আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেন সিইসি। বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে তিনি বলেন, “নির্বাচন এক ধরনের যু”দ্ধ হলেও অনেকে বলে, যু”দ্ধের ময়দানে এসো, সেখানে গেলে অ’স্ত্র নিয়ে যু’দ্ধ করতে হবে না, জনসমর্থন নিয়ে লড়াই করতে হবে।” আপনারা তরবারি ও রা”ইফেল নিয়ে যু’দ্ধ করবেন না। জনসমর্থনে এই যু’দ্ধ করা উচিত। ভোটকেন্দ্র দখল হলে প্রতিরোধ করুন এবং অভিযোগ করুন। ইসি আপনাদের সাথে থাকবে।’

সিইসি বলেন, ‘ইসি সহিং’/সতা বন্ধ করতে পারে না। দলগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ আপনি খেলোয়াড়। তোমরা মাঠে খেলো, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। এখন পর্যন্ত আমরা ১০০% স্বচ্ছ। আমি ভবিষ্যতে চোর হবো নাকি ডাকাত হবো—এখন বলা ঠিক হবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচন বা ২০১৮ এর নির্বাচনের জন্য আমাদের দোষারোপ করবেন না। ‘

সিইসি আরও বলেন, সরকার গঠনে কোনো একক দলের ৩০০ আসনে জয়ী হওয়ার কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই। কিন্তু ইতিহাস বলছে, তবে ইতিহাস বলে, সে ক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃ”ত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়াবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমি বারবার বলেছি যে রাজনৈতিক দল এবং সরকার এক নয়। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের চেয়ারপারসন। কিন্তু তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি সরকার প্রধান। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নন। এটা বুঝতে হবে। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাইবো। সরকার সাহায্য না করলে নির্বাচনের ফলাফল ভ”য়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, “প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজন। নির্বাচনে আমি কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করতে পারি না। তবে আমি বারবার সব দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাব। সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ‘

ইভিএম প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে সমান গতিতে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। আমরা সত্যিই চিন্তিত। কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিং/’সতা, ব্যালট পেপার চুরি হলে কতটা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে? জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করবেন এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি তৈরি করতে সমঝোতা ও ঐকমত্যের মাধ্যমে বিতর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এমতাবস্থায় অরাজনৈতিক সম্মানিত ব্যক্তিরা জাতির সংকটময় মুহূর্তে নিজেদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে সংগঠিত ও কাজে লাগিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।’

এনডিএমের ১৩টি প্রস্তাব

সংলাপে ১৩ দফা প্রস্তাব পেশ করে এনডিএম। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের সময় ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টার’-এর ভূমিকা গ্রহণকারী সিইসি; জনপ্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির হাতে; ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার প্রথা বাতিল করতে হবে; একাধিক দিনে ভোট নিতে হবে; ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করতে হবে; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বসাতে হবে এবং রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সংলাপে বিএনএফের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসেনি। দলটির নেতারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তারা ইসিকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কংগ্রেস জাতীয় বাজেটে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা, ইসি কর্মকর্তাদের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করা, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলির ক্ষমতা আনাসহ ১৬ দফা প্রস্তাব করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইসি।

সিইসির সভাপতিত্বে সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আজ ৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ

সোমবারের সংলাপে আমন্ত্রিত চার দল হলো বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কালচারাল লিবারেশন অ্যালায়েন্স, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে জুনের যেকোনো সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। তবে দেশগুলো প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটাই প্রত্যাশা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সকলের জন্য কাম্য।

About bisso Jit

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *