স্বপ্নের পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সারা-দেশজুড়ে চলছে বেশ শোরগোল। আগামী ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা। তবে এর আগেই পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির সাজানো গল্পের রহসউ ফাঁস করলেন সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তার দেয়া এ তথ্যের জের ধরে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির গল্প বানোয়াট করায় যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। সেই সময়ে সরকারের একজন মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাও বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য লবিং করেছিলেন। দেশি-বিদেশি চাপে দুদককে মামলা করতে হয়। সেতু সচিবসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর কাজ প্রতারক সংস্থার হাতে না দিয়ে বিশ্বব্যাংক একের পর এক দুর্নীতির গল্প বানাতে চলেছে। কথিত দুর্নীতির তদন্তে তিনি তার নিজস্ব দলও বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন।
জড়িতদের ছুটিতে পাঠানো, দুদকের বিশেষজ্ঞ দল গঠন, তদন্তের অগ্রগতি জানাতে এবং তাদের সুপারিশ গ্রহণের জন্য বিশ্বব্যাংক তিন দফা প্রস্তাব দেয়। তবে এমন প্রস্তাবের আগেই তদন্তে একটি টিম গঠন করে দুদক। তবে অভিযোগ প্রমাণের আগেই আসামিকে ছুটিতে পাঠানো এবং তদন্তে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা নাকচ করে দেয় দুদক।
দুদকের অবস্থানের মধ্যে, একজন সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা পদ্মায় বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে দেওয়ার তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য দুদকের কাছে লবিং করেছিলেন। তৎকালীন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ডেকে মন্ত্রী আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার এবং তার ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন। এতে হতবাক দুদক কমিশনার।
সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী একদিন সকালে আমাকে ফোন করেন। তারা বলেন, দুদককে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এজন্য আমি আপনার সাথে আলোচনা করতে চাই। আমি বললাম আমাদের একজন কমিশনার এবং একজন চেয়ারম্যান আছে। আগে তাদের সাথে আলোচনা করুন। তখন তারা বলে যে তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছে যে আপনি আইনের দিকটি দেখেন বলে তার সাথে কথা বলুন। আমি বললাম তুমি কি চাও। তখন তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের দল আসার আগেই আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। একই সঙ্গে আবুল হোসেনের ফার্মে অভিযান চালিয়ে তাদের সব কাগজপত্র জব্দ করতে হবে। আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তারা দেখা মাত্রই টাকা পরিশোধ করবে।
বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এবং সরকারের একাংশের চাপে আবুল হোসেন পদত্যাগে বাধ্য হন। অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে দুদকের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। আটক করা হয় সেতু সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের কথায় অনেক কিছুই হচ্ছে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গেছে, তারপর সরকারকে অনেক অ্যাকশনে যেতে হয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাংক বলছে আমরা টাকা দেব। আর সরকারও মনে মনে ভাবছে, তাই কিছু শর্ত পূরণ করেছে সরকার। পরে দেখা গেছে যে যা করা হয়েছে তা সঠিক নয় এবং দেখা গেছে তারা এসব দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়।
দুদকের সাবেক এই কমিশনার আরও বলেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ধরন ও প্রস্তাবনা দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের পেছনে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।
সাবেক এই কমিশনার বলেন, তারা বিশ্বব্যাংকের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এবং পদ্মা সেতুর জন্য শেষ দিনের অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করতে পারে।
এদিকে পদ্মাসেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন কাটছে গোটা দেশের মানুষের। তবে আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না কাউকে। আগামী ২৫ জুন সকল জল্পনা-কল্নার অবসান কাটিয়ে পদ্মাসেতু জনসাধারণের জন্য উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।