দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বড় ধরনের সংকটময় পরিস্তিতির মধ্যে দিয়ে সময় অতি বাহিত করছে বিএনপি দল। অবশ্যে এই দলটি বেহস কয়েকবার বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে বর্তমান সময়ে টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এমনকি এই দলের কেন্দ্রয়ী পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে দলের তৃনমূল পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত। এমনকি অনেকেই অনেক ধরনের মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে কারাগারে বন্ধী জীবন-যাপন করছে। তবে সম্প্রতি এই দলটি নতুন এক পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দিতে সেল গঠন দলটির। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পরিকল্পনা মাফিক পরিচালনা করতে আইনজীবীদের নিয়ে একটি আইনি সহায়তা সেল গঠন করেছে বিএনপি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বারের সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে এই সেলের প্রধান করা হয়েছে। এই সেল নিম্ন আদালতে যেসব মামলা ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে অথবা যেসব মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে- এসব মামলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেবে। এদিকে, দলের নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বেশ কয়েকটি মামলায় হঠাৎ করে গতি পেয়েছে। এ মামলাগুলোর অগ্রগতি জেনে করণীয় ঠিক করতে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্য থেকে স্কাইপি’র মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন তিনি। এতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গত ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দায়েরকৃত মা/ম/লার মধ্যে অন্তত ৪০টি মাম/লা/র বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় চলতি মাস থেকেই পর্যায়ক্রমে রায় ঘোষণাও হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি নেতারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলন করে বিএনপি। এবং ২০১৫ সালে সরকারের বছরপূর্তিতে বিএনপি লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলন চলাকালে নানা ঘটনায় বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙ/চু/র, অ/গ্নি/সং/যোগ, বি/স্ফো/র/ণ ও আ/গু/নে পু/ড়ি/য়ে হ/ত্যা/র/ অভিযোগে মা/ম/লা হয়। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, সামনে সরকার বি/রো/ধী আন্দোলন দমাতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নেতাদের অযোগ্য করতে নেতাকর্মীদের সাজা দিতে চায়। এ উদ্দেশ্যে নির্বাচনের দুই বছর আগে থেকে সরকার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছে।
এই অবস্থায় আইনজীবীদের মতামত ও করণীয় ঠিক করতে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী নেতৃত্বে এই বৈঠকে আইনজীবীরা অংশ নেন। এছাড়াও ঢাকা বারের আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠকে আরো অংশ নেন মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম মিয়া, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা, জিল্লুর রহমান, হোসেন আলী খান হাসান, এম হেলাল উদ্দিন, আব্দুল খালেক মিলন, আবুল কালাম, নুরুজ্জামান তপন, নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মো. হযরত আলী, দেলোয়ার জাহান রুমী, আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, জহির রায়হান জসীম, আমিরুল ইসলাম আমির, খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম, মাহমুদউল্লাহ জুয়েল, আবুল কালাম, জিয়া উদ্দিন জিয়া,নাজমুল হকসহ ৪০ জন আইনজীবী। সন্ধ্যা সাতটায় পরিচয় পর্বের মধ্যদিয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনজীবীরা জানান, বৈঠকে মূলত নিম্ন আদালতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলায় ট্রায়াল চলছে অথবা চার্জশিট হয়েছে সেসব মামলা সুচারুভাবে পরিচালনা করতে। এ জন্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্বে একটি আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের কাছ থেকে মামলার আদ্যোপান্ত সংগ্রহ করে সেলের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বারের আইনজীবী ফোরামের প্রধান মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে তা আগামী চারদিনের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। দলীয় ফোরামে বিচার বিশ্লেষণ করে কোন মামলায় কোন সিনিয়র আইনজীবীকে কাজে লাগানো যায় তা নির্ধারণ করে দেবে দল। দলীয় নেতাদের এসব মা/ম/লা আইনজীবী নেতারা বিনা পয়সায় লড়বেন বলে দলের কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। বৈঠকে আইনজীবী নেতারা বলেছেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরেপক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদালতের পাশাপাশি রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আইনজীবীরা। বৈঠকে আইনজীবীরা কে কতো দলীয় মামলা পরিচালনা করছেন তা তুলে ধরেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী বলেন, এসময় কয়েকজন মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, যারা দলীয় নেতাদের মা/ম/লা পরিচালনা করছে তাদের মধ্যে আরও সমন্বয় দরকার। যাতে আমাদের কারণে কোন নেতার মিথ্যা মামলায় সাজা না হয়। যেসব মা/ম/লা/র বিচার চলছে তা মোকাবেলায় এখন থেকে কাজ করতে হবে।
অবশ্যে দলটি চলমান সকল সংকট মোকাবিলা করে পুনরায় ক্ষমতায় আরোহনের জন্য আপ্রান ভাবে চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে দলটি চলমান দূরঅবস্থা নিরসনে গ্রহন করেছে নাণা ধরনের পদক্ষেপ। এমনকি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও তারা বেশ আশাবদী। এবং আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে সরকারের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে দলটি।