আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুনের মধ্যে দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করছেন।
দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সাহস নিয়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, আমরা ভোট অস্বচ্ছ হতে দেব না। ভোটের দিন অস্বচ্ছতার চেষ্টা হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেব।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সিইসি এ আহ্বান জানান।
এর আগে সকাল ১১টায় সিইসির সভাপতিত্বে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলেও জানিয়েছে ইসি।
এদিকে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বেশ কিছু ‘অ্যাকশন’ নিয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। এছাড়া আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ভোট ছিনতাইয়ের হুমকি দেওয়ায় নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। একজন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশনও।
অন্যদিকে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার অভিযোগ ওঠায় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তবে ইসির এসব পদক্ষেপের পরও হাবিবুলের কমিশন নিয়ে এখনো ‘নেতিবাচক’ অবস্থানে রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্বদানকারী বিএনপি। বিএনপি বলছে, তারা এই ইসির অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
এ প্রেক্ষাপটে সব দলের অংশগ্রহণে ভোট গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। ২০০ বা ২৫০ সিট যদি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যায়, তাহলে হয়ত সরকার গঠন হবে, কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি (বৈধতা) অনেক কমে যাবে।বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’
সিইসি বলেন, নির্বাচন অস্বচ্ছ করতে ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হলে সেই নির্বাচনকেও ব্ল্যাক আউট বা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূট কৌশল করতে পারবে না। নির্বাচন ধামাচাপা দিতে যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, তাহলে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে, এটা বরদাস্ত করা হবে না।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কমিশন বিশ্বাস করে সরকার ও দলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেই বিভাজন ভুলে গেলে চলবে না। সরকার, দল নয়, কমিশনকে সাহায্য করবে।’
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “আমি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাই। ইভিএম আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক একটি বিষয়। … কারণ ওখানে গিয়ে আমি ১০টি ভোট দিতে পারব না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ আগে আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে, তারপর বায়োমেট্রিক্সে মিলতে হবে।’
এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, অন্যথায় নয়। এদিকে সরকার হটাতে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের জন্য আলোচনা করে যাচ্ছে।