দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি (জাপা) ২৬টি আসনে সমঝোতা করলেও দলটির প্রার্থীরা ২৫৭টি আসনে নির্বাচনে অংশ নেন। তবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ঘোষিত জাতীয় পার্টির অনেক প্রার্থীই ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। বুধবার (৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত জাপার ২৮ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে নিজেদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কোন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন এবং কোনো প্রার্থী নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাব্বির আহমদ নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একই দিন চুয়াডাঙ্গা-১ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে জাপা প্রার্থী প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন খান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অরাজক। হু/মকি এমন চাপের সাথে আসে যেগুলো সামলাতে আমার শারীরিক ও মানসিক শক্তি নেই। এ জন্য আমি সরে দাঁড়ালাম।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের জাপা প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমার দল ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হবে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ জন্য আমি সরে দাঁড়ালাম।
এদিকে বুধবার পর্যন্ত জাপা নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাহার করা ২৮ প্রার্থী হলেন- দিনাজপুর-২ মাহবুবুর রহমান (নিষিদ্ধ), লালমনিরহাট-১ আসনে। হাবিবুল হক বন্ড মিয়া (প্রত্যাহার) নওগাঁ-২ মোঃ তোফাজ্জল হোসেন (বাদ), নাটোর-৪ অধ্যাপক মোঃ আলাউদ্দিন মৃধা (প্রত্যাহার), সিরাজগঞ্জ-৩ মোঃ জাকির হোসেন (বাদ), চুয়াডাঙ্গা-১ অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন (প্রত্যাহার)। ), চুয়াডাঙ্গা-২ মোঃ রবিউল ইসলাম (বাদ), বরগুনা-১ মোঃ খলিলুর রহমান (বাদ), বরিশাল-২ ইকবাল হোসেন তাপস (বাদ), বরিশাল-৫ ইকবাল হোসেন তাপস (বাদ), টাঙ্গাইল-৭ জহিরুল ইসলাম জহির (বাদ)। (বাদ), ঢাকা-এ মীর আবদুস সবুর আসুদ (প্রত্যাহার), ঢাকা-৬ অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ (প্রত্যাহার), ঢাকা-৭ তারেক এ আদেল (প্রত্যাহার), ঢাকা-১৩ শফিকুল ইসলাম সেন্টু (প্রত্যাহার)।
এছাড়া ঢাকা-১৭ সালমা ইসলাম (প্রত্যাহার), গাজীপুর-১ এমএম নিয়াজ উদ্দিন (নিষিদ্ধ), গাজীপুর-২ জয়নাল আবেদীন (নিষিদ্ধ), গাজীপুর-৪ মোঃ সামসুদ্দিন খান (প্রত্যাহার), গাজীপুর-৫ এমএম নিয়াজ উদ্দিন (প্রত্যাহার), নারায়ণগঞ্জ-৪ আলহাজ্ব ছালাহ উদ্দিন খোকা মোল্লা (প্রত্যাহার), হবিগঞ্জ-২ শংকর পাল (প্রত্যাহার), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া (প্রত্যাহার), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ তারেক আহমেদ আদেল (প্রত্যাহার), কুমিল্লা-২ এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম (প্রত্যাহার), চাঁদপুর-১ একেএসএম শহিদুল ইসলাম (প্রত্যাহার), চট্টগ্রাম-১৪ আবু জাফর মোঃ অলিউল্লাহ (প্রত্যাহার), মো. পার্বত্য রাঙ্গামাটি হারুনুর রশিদ মাতুব্বর (প্রত্যাহার)।
এদিকে নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাহারকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, মাঠে থাকা দলের বেশির ভাগ প্রার্থীই নিষ্ক্রিয়। তবে দলটি সরকার গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল।
জিএম কাদের বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবশ্যই সংগঠনবিরোধী। প্রত্যাহার করা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২২ নভেম্বর জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সঙ্গে ‘সমঝোতার’ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ২৬ টি আসন ছেড়ে দেয়। এসব আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেন।