আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি। নির্বাচনের আগে দাবি আদায় হবে না এমন ধারণা থেকেই দলটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোট-পরবর্তী কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করতে বিএনপি বর্তমানে কর্মসূচি নিচ্ছে।
আগামী শুক্রবার থেকে সারাদেশে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে এই ‘প্রচার’ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে নির্বাচন যে ‘একতরফা’ তা বিদেশিদের কাছে প্রমাণ করতে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে আসনভিত্তিক দলের সাবেক ও ভবিষ্যৎ সংসদ সদস্য প্রার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এসব বৈঠকে ভোটের পরও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকেও একই বার্তা দেন দলটির প্রধান এই নেতা।
বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলো যেভাবে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাতে এই নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দলটির নেতাদের দাবি, সম্প্রতি কূটনৈতিক পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিদেশিরা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপিও মনে করছে, ভোটের পর ভিসা নীতিমালার আবেদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নীতিনির্ধারক বলেন, ভোটের পর মার্কিন সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলে কর্মসূচি জোরদার করা হবে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-পরবর্তী পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হবে। সে জন্য কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা সরকার পতনের জন্য আন্দোলন করছি। এই লক্ষ্য অর্জনের পর আমাদের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে। সে পর্যন্ত আমাদের চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
আসন ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা
বিএনপি নেতারা জানান, আসনভিত্তিক আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচি জোরদার করতে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরির চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় সভা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের সাবেক একজন সংসদ সদস্য বলেন, সামনের দিনগুলোতে আসনভিত্তিক কর্মসূচি চালাতে দল থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে সাবেক সংসদ সদস্য ও ভবিষ্যতে প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রচারণা
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, বুধবার ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ভার্চুয়াল বক্তব্য দেবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একই সঙ্গে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামীকাল (আজ) বিএনপির হাইকমান্ড গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন এবং আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন।
আগামী শুক্রবার থেকে বয়কট কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ পর্যায়ে দলটি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সারাদেশে ভোটার নিরুৎসাহিত গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু করতে চায়। এ পর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার বার্তা, পথসভা, উঠান বৈঠক ইত্যাদি করা যেতে পারে। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও থাকবে।
এছাড়া ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আন্দোলন ‘চূড়ায়’ পৌঁছালে অফিস-আদালতে না যাওয়া, যান চলাচল বন্ধ, কলকারখানা বন্ধ এবং সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হতে পারে। তবে এই বাস্তবতা তৈরি করা খুবই কঠিন বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির যৌথ আন্দোলনের মিত্র জোট ধামাকার মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে ভোটারদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করব।