স্বামীর সঙ্গে বিরোধ, ভারতের আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ নানা কারণে টানাপোড়েনে রয়েছেন তিনবারের সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ও অনুগত টাইগার নেতাকর্মীরা বঞ্চনার কারণে দূরে সরে গেছেন। সিংগাইরের ১১টি ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে ২-৩ জন ছাড়া সবাই প্রকাশ্যে এমপির বিরোধিতা করছেন এবং মমতাজ তার নিজের দলে কোণঠাসা, ইমেজ সঙ্কটে পড়েছেন। তার সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে, যা তাকে খুবই চিন্তিত করে তুলেছে।
জানা গেছে, সিংগাইরের একাধিক প্রভাবশালী পৌর কাউন্সিলর, উপজেলার জনপ্রিয় দলীয় নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করতে দ্বিধা করছেন না। সম্প্রতি ভারতীয় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাজেদ খান, সিংগাইর উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে এক বছর আগে আ স ম মঈন হাসানের ওপর মমতাজের অনুসারীদের হা/মলার বিচার না হওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ তার তৃতীয় স্বামী। দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাম্পত্য কলহ চলছে। এখন তারা এক ছাদের নিচে থাকে না। মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন যাবত পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত। এমপি মমতাজ কানাডা সফর করেছেন। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও তার সঙ্গে ছিলেন একজন ব্যক্তিগত সহকারীও। সঙ্গীর তালিকায় ছিলেন না স্বামী ডা. মঈন হাসান। এ নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন মমতাজ বেগম।
জাতীয় পার্টির এ আসনের দিকে কড়া নজর নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচন করলে এ আসনে জাপার অন্যতম টার্গেট হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক এমপি শিল্পপতি এসএম আবদুল মান্নান এ আসনে জয়ের জন্য জোর লবিং করছেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মমতাজের ঘোর বিরোধী হয়ে উঠেছেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পপতি দেওয়ান জাহিদ হোসেন টুলু। কয়েক বছর ধরে তিনি গৃহহীনদের জন্য শত শত ঘরবাড়ি, বেকারত্ব দূরীকরণে শত শত হ্যালোবাইক, শতাধিক নতুন মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সহায়তাসহ করছেন। তার এসব বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এমপি মমতাজ বেগমকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এ ছাড়া তার চাচা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, এক সময়ের জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড়, জনপ্রিয় নেতা দেওয়ান সাফিউল আরেফিন টুটুল সিংগাইরের প্রত্যন্ত এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। নিঃস্বার্থ নেতা ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে তার ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। এবার দল তাকে মনোনয়ন না দিলেও এলাকাবাসীর স্বার্থে তিনি নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেন। এ ছাড়া সিংগাইর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানও বসে নেই।
এ আসনে নজর রাখছেন বিএনপির জেলা সভাপতি মুন্নু গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান আফরোজা খান রিতা। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে তার আগ্রহ প্রকাশ মমতাজের জন্য আরেকটি বাড়তি উত্তেজনা। কারণ ২০০৮ সালের আগে সব নির্বাচনে এ আসনসহ মানিকগঞ্জের সবকটি আসনই ছিল বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। বিএনপির সাবেক এমপি ইঞ্জি. মইনুল ইসলাম শান্তও মনোনয়ন চাইবেন। তার বাবা এ আসনের এমপি ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। এদিকে তার নির্বাচনী এলাকার প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় দুই উপজেলা চেয়ারম্যানও এমপি মমতাজের বিরুদ্ধে খোলামেলা কথা বলছেন।
সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক দেওয়ান সায়েদুর রহমানও এমপি মমতাজের বিরুদ্ধে হ/ত্যার ষ/ড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
ঐক্যের কারণে এ আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলে জাতীয় পার্টি পেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এসব বিষয়ে মতামত জানতে এমপি মমতাজ বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ছাড়া খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। তিনি তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজেরও উত্তর দেননি।
সূত্র জানায়, মমতাজ বেগম প্রথমে ২০০৮ সালে সংরক্ষিত আসনে এমপি নির্বাচিত হন, তারপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে।