মন্দা পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলো যেমন খরচ কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা নতুন বাজার খুঁজছেন। বিশেষ করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া এবং আফ্রিকার মতো অপ্রচলিত বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ওইসব দেশে কর্মরত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকেও রপ্তানির এই ধারা বজায় রেখে পোশাক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা ৪৭.৩৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ২৩.৩৮৪ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া আমেরিকায় ৮.২৭৩ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যে ৫.৩৪৪ বিলিয়ন ডলার এবং কানাডায় ১.৫১৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে।
এদিকে, ২০২১ সালে পোশাক খাতের আয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে ৪৫.৮০৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলেও গত দুই বছরে মন্দা পরিস্থিতির কারণে প্রবৃদ্ধির হার কমছে।
এই সংকট কাটিয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা অন্যান্য দেশে রপ্তানি বাড়িয়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় আমাদের রপ্তানি হ্রাস কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করছি এবং আমরা এর কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ”
বৈশ্বিক মন্দার পাশাপাশি রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজার হারানোর আশঙ্কায় বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা নতুন বাজার খুঁজছেন। বিশেষ করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছর ধরে পোশাক পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। ২০২৩ সালে অপ্রচলিত দেশগুলি থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৮.৮৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে জাপানের ১.৬৭৫ বিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়ার ১.২৮৪ বিলিয়ন ডলার, ভারতের ৯১৮ মিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৬৭ মিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে, এই বাজারগুলি থেকে আয় ছিল ৭.৩৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও, ২০২১ সালে, অপ্রচলিত বাজার থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৫.৬৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২০ সালে এই আয় ছিল ৪.৫১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, “বিশ্ব মন্দা শুরু হলে আমরা ইউরোপকে পাশ কাটিয়ে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকেছিলাম। বিশেষ করে, আমাদের পণ্যের একটি বড় বাজার এখন মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠছে।”
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে গত চার বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০.৯৮ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রবৃদ্ধির হার ৩৭.৪২ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৩৯.২৮ শতাংশ এবং অপ্রচলিত বাজারের দেশগুলিতে ৬০.৮৯ শতাংশ। ।
তবে নতুন বাজারে পণ্য পাঠাতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হয় দেশের পোশাক ব্যবসায়ীদের। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক এ এম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা আগে থেকেই নতুন বাজার খুঁজছিলাম। কিন্তু এখন ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমাতে সেই অনুসন্ধান আরও জোরদার করতে হবে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রপ্তানি বাড়িয়ে মন্দা কাটিয়ে উঠছে। অপ্রচলিত দেশগুলোতে পোশাক।তবে ওই দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মীদেরও রপ্তানির এই ধারা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।