পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় কমছে। শিল্প মালিকরা আশার আলো দেখছেন না। এমতাবস্থায় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ধীরগতিতে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে নিটওয়্যার শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের ৪৮.০৮ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে গেছে। অথচ সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে গেছে ৪৭.৪০ শতাংশ।
একইভাবে, মার্কিন বাজারে মোট পোশাক রপ্তানির শেয়ারও ১৯.৫৭ শতাংশ থেকে ১৭.৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি কানাডার বাজারেও এ হার ৩.২৬ শতাংশ থেকে নেমেছে ৩.০৪ শতাংশে।
বিপরীতে, যুক্তরাজ্যের বাজারে পোশাক রপ্তানি ১১.৬১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২.৪৬ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির হার ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানগুলি স্পষ্টভাবে দেখায় যে বাজার এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এসব হিসাবের যোগফল হলো: তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় গত দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কমেছে।
তবে এ খাত আবার কবে ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানিয়েছে, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আরও কিছু সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের রপ্তানি আয় কমছে। তারপরও গত মাসে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এই মাসে আমাদের ১০ দিনের জন্য কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। যা অনেক বড় ব্যাপার। সব মিলিয়ে, আমি বলব যে পরিস্থিতি শীঘ্রই যে কোনও সময় উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা আশা করছি জানুয়ারির মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
তাহলে কতদিন পর দেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াবে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে? নানা সমীকরণে হিসাব করেও আশার আলো দেখছে না বিকেএমইএ।
জাম সঙ্গমের সাথে কথা বলছেন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
”সব মিলিয়ে দেশের রপ্তানি আয়ের অবস্থা ভালো নয়। বেশিরভাগ কারখানা তাদের ক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে চলতে থাকে। আমরা আশা করছিলাম সামনের দিনগুলোতে তা আরও বাড়বে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি – চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং পোশাক শ্রমিকদের সাম্প্রতিক মজুরি বৃদ্ধি – ক্রেতাদের নজরে রাখছে।” তিনি যোগ করে বলেন।
তবে ক্রয় আদেশের প্রবণতা দেখে খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দ্রুত কাটতে পারলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। না হলে গুনতে হবে অপেক্ষার প্রহর।
তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্লেষক অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমরাও দেখতে পাচ্ছি জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যের ক্রয়াদেশ পরিস্থিতি বেশ ভালো, যদি এ শিল্প খাতটি ঠিকভাবে চলতে থাকে। যদি এ খাত ঠিকমতো চলমান না থাকে, তাহলে সেই জানুয়ারিরটা হয়তো পরের মওসুমে চলে যেতে পারে। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের খুব সচেতনভাবে ভাবতে হবে। সরকার ও মালিকপক্ষ যা ভাবছে তা নয়। এখানে শ্রমিক নেতা ও সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ বিষয়টি সচেতনভাবে ভাবতে হবে।
এর মধ্যে শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি দিতে না পেরে কতগুলো কারখানা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে, বাজার ধরে রাখা ও ঘুরে দাঁড়ানোর হিসাবও তার ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।