Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার দুদকের জালে ধরা খেলেন পাসপোর্টের সেই সাচ্চু

এবার দুদকের জালে ধরা খেলেন পাসপোর্টের সেই সাচ্চু

দুদকের (দুদক দমন কমিশন) তদন্তের মুখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোঃ সাচ্চু মিয়া। ইতিমধ্যেই তাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে সাচ্চু এখন স্থায়ীভাবে বরখাস্তের মুখোমুখি।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। একপর্যায়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে নিজের এবং স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বাধ্য হন সাচ্চু। কিন্তু এতেই বিপত্তি বাধে। বাস্তব সম্পদের সাথে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে বিস্তৃত অমিল পাওয়া যায়। এ কারণে দুদক বিস্তারিত তদন্ত শুরু করলে হঠাৎ করেই তিনি কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। আট মাসের বেশি কাজে অনুপস্থিত।

বিভিন্ন সময়ে সাচ্চুর কাছ থেকে ঘুষের শিকার হওয়া একাধিক পাসপোর্ট কর্মকর্তা বলেন, সাচ্চু যেহেতু রক্ষণা প্রকৌশলী ছিলেন, তাই আইটি সেক্টরের সব ধরনের মালামাল ও যন্ত্রাংশ তার অধীনে রাখা হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী ‘বকশিশ’ না পেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রিলিজ করতেন না সাচ্চু। ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হন। এভাবে চাঁদাবাজির কায়দায় দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস থেকে ঘুষ আদায় করত সাচ্চু। সূত্র জানায়, যারা সাচ্চুকে ঘুষ দিতেন তারাও বড় ঘুষখোর। কারণ পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকলে বা আবেদন জমা না দিলে বিশেষ ঘুষের চ্যানেলও বন্ধ হয়ে যায়। তাই চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো অফিস চালাতে সাচ্চুকে ঘুষ দিতে কেউ দ্বিধা করবে না। এ ছাড়া বিভিন্ন কেনাকাটায় কারচুপি করে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন সাচ্চু।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাচ্চুর নামে খোলা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উপপরিচালক যুগান্তরকে বলেন, সাচ্চু সারা দেশের বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিস থেকে নিয়মিত ঘুস নিতেন। এজন্য তিনি কয়েকটি বিকাশ ও নগদ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করেন। এছাড়া তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে খোলা বিকাশ অ্যাকাউন্টেও (০১৭৫১*১৩০৩৫) লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে লেনদেনের পরিমাণ ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৫ টাকা।

দুদক জানায়, সাচ্চু ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা। ২০১২ সালে তিনি চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সাকুল্যে বেতন পান ৬৫ হাজার টাকা। অথচ তিনি অভিজাত জীবনযাপন করেন। চলাফেরা করেন ৪০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িতে। এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি সুপরিসর ফ্ল্যাট রয়েছে তার।

পাসপোর্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য ১৩ জানুয়ারি ভারতে যান সাচ্চু। কিন্তু এরপর আর কাজে ফেরেননি। তিনি ভারত থেকে ফিরেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাকে বেশ কয়েকটি কল লেটার দেওয়া হয়েছিল। পরপর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকাজ) দেওয়ার পরও তিনি কোনো সাড়া পাননি। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু বলেন, সাচ্চু মিয়া প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ অধিদপ্তরের নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

 

About bisso Jit

Check Also

থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো কট ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সাবেক আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে কাঁঠালিয়া থানার একটি মামলায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *