শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর দায়িত্বে রয়েছে। এ জন্য প্রতি বছর তাদের কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা দিতে হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। অন্য মন্ত্রণালয়কে কাজ ও অর্থ না দিয়ে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) এই দায়িত্ব দিতে চায়। দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাটানি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সংকট নিরসনে চলতি মাসে দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে পারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও)।
এই সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, “প্রাথমিক বই মুদ্রণ ও বিতরণ আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হবে। অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এটি একটি সিদ্ধান্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সচিব।এ জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও চূড়ান্ত হয়েছে।কিন্তু অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো বাকি।এ বিষয়ে চলতি মাসেই
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবার দেখা হবে। তবে তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই ছাপানো নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর আগেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিকবার বই ছাপার উদ্যোগ নিলেও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়নি। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, প্রাথমিকের বই ছাপার দায়িত্ব তারা নিজেরাই নিতে চান। ফরিদ আহমেদ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. জাকির হোসেনও। সচিব বলেন, ‘এবারের বই যেমন আছে সেভাবে অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী এগোব। তবে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই দায়িত্ব পালন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তাহলে সরকারের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এরপর গত বছরের ১৩ মার্চ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, 2018-এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী 22 মার্চ প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন।
এরপর গত ২৯ মার্চ সংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলায়মান খানের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি থাকায় আইনের সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
এরপর গত ৬ নভেম্বর দীপু মনির সভাপতিত্বে সর্বশেষ বৈঠকে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. আইনের সংশোধিত খসড়া প্রমিতকরণের জন্য জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আরেকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক বইসহ সব পাঠ্যপুস্তক এনসিটিবির মাধ্যমে ছাপানোর কথা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, “আইন সংশোধনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষার মতামত চেয়েছিলাম। তারা তা দিয়েছে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী ড. এই বিষয়ে একটু ভিন্ন মতামত আছে, তিনি অনুমোদন করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে শিগগিরই তার কার্যালয়ে বৈঠক হতে পারে জানিয়ে সচিব বলেন, তারা ডাকলে আমরা যাব। আমি আপনাকে জানাব যে আমাদের কাজের অগ্রগতি রয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা বাস্তবায়ন করা হবে।