দুই সপ্তাহ আগে শেষ হয়ে গেল কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রিফাত জয়ী হন। সাক্কু ভেবেছিলেন নির্বাচনে তিনিই জয়ী হবেন। কিন্তু যখন তিনি পরাজিত হন তখন তিনি ভোট কারচুপির অভিযোগ আনেন। এদিকে গুঞ্জন ওঠে একটি ফোন কল এর পরেই পাল্টে যায় ভোটের ফলাফল।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন এবং প্রকাশিত গেজেট স্থগিত দাবি করে মামলা করতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছেন পরাজিত মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
এরই মধ্যে সাক্কু এ সংক্রান্ত নথি ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে মাম”লা করতে হয়। তাই তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা দায়েরের সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ২২ জুন চারটি কেন্দ্রের ফলাফল ও গেজেট বাতিলের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন সাক্কু। কিন্তু কমিশন তার আবেদন আমলে না নিয়ে যথাসময়ে গেজেট আকারে ফলাফল প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার রাতে কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক বলেন, আমার ফলাফল পরিকল্পিতভাবে ছি”নিয়ে নেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা জা”লিয়াতি করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তার কথা রাখতে পারেনি, এটি একটি মেরুদণ্ডহীন দুর্বল নির্বাচন কমিশন। এই কমিশনের কোন ক্ষমতা নেই।
“শহরের ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আমার এজেন্টদের ফলাফল না জানিয়ে দ্রুত চলে যান,” এমনটিই বলেন সাক্কু। দিশাবন্দের নতুন ও পুরাতন ভবনের ভোটকেন্দ্রে ফলাফলের তালিকায় স্বাক্ষর ও পিন নম্বরগুলো আমার এজেন্টদের জন্য নয়। শালবন বিহার কেন্দ্রে ভোটের ফলাফলে আমার এজেন্টের কোনো স্বাক্ষর নেই। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টও নয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার অবৈধ হস্তক্ষেপ ও অদৃশ্য রাজনৈতিক শক্তির প্রভাবে ফল ঘোষণা বিলম্বিত হয়েছে। এতে শিল্পকলা একাডেমিতে অরাজকতা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, আমি চার কেন্দ্রের ফলাফলে কারচুপি এবং জালিয়াতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে ওইসব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি করেছিলাম। একই সঙ্গে গেজেট স্থগিত করার আবেদনও করেছি। কিন্তু কমিশন তা আমলে নেয়নি। এখন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাব।
গত ২৩ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র আরফানুল হক রিফাত, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলরদের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ জুন মনিরুল হক সাক্কু প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনে তিনি দাবি করেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র পদে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল একটি একটি করে ঘোষণা করেন। এতে মনিরুল হক টেবিলঘড়ি প্রতীকে ৪৮ হাজার ৪৯২ ভোট পান। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট পান। ১০১টি ভোটকেন্দ্রে সাক্কু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৬২৯ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন।
১০১টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসার প্রকাশ্যে পাঁচ মিনিট সময় চেয়ে অজ্ঞাত টেলিফোন পান। এরপর তিনি তার চেয়ার থেকে উঠে ফলাফল স্থগিত করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থগিত বাকি চারটি ভোটকেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণার ব্যবস্থা নেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর সাক্কু ও তার নির্বাচনী এজেন্টরা প্রতিবাদ করেন।
এরপর রিটার্নিং অফিসার ৪৫ মিনিটের জন্য ফলাফল স্থগিত করেন। এরপর একে একে ফলাফল ঘোষণা না করে ১০১টি ভোটকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে চারটি অঘোষিত কেন্দ্রের ফলাফল যোগ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হককে ৫০ হাজার ৩১০ ভোট দেখিয়ে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী যিনি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তিনি বলেন, যে সকল প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হন তারা প্রায়ই বলে থাকেন যে, নির্বাচনে কারচুপি ঘটেছে। কিন্তু কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনেক স্পষ্ট ভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই নির্বাচনের যে ফলাফল প্রকাশ হয়েছে, সেটাতে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। ভোটের ফলাফল প্রকাশ করার চারদিনের মাথায় মনিরুল হক সাক্কু যে অভিযোগ তুলেছিলেন তার ব্যাখ্যা দেয় নির্বাচন কমিশন।