বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আদালতকে বলেন, এর আগে যখন আমাকে ও মির্জা ফখরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন আমাকে ও মির্জা ফখরুলকে কারাগারের ফাঁ/সির সেলে রাখা হয়েছিল। এবার আমাকে ফ্লোরে রাখা হচ্ছে। এবার তো হেঁটে আসছি। এর পরেরবার হয়তো হুইল চেয়ারে করে আমাকে আসতে হবে।
জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ গোপন ও অধিগ্রহণের মামলায় রোববার (৫ নভেম্বর) তাকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে হাজির করা হয়। এদিকে কারাগারে ডিভিশনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানির একপর্যায়ে বিচারপতির উদ্দেশে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস।
এ সময় বিচারক বলেন, আমরা হাইকোর্টের মতো সরাসরি আদেশ দিতে পারি না। আমি দেখব আপনি আবেদন করেছেন।
এরপর মির্জা আব্বাসের আইনজীবীকে বিচারক বলেন, তাকে কি অন্য কোনো মামলায় রিমান্ডে চাওয়া হয়েছে? এ সময় মির্জা আব্বাস বলেন, না, চাওয়া হয়নি। এরপর বিচারক বলেন, দেখুন আজ কী আদেশ দেয়। না হলে আগামী ৮ নভেম্বর মামলার ধার্য তারিখে এ বিষয়ে শুনানি হবে। এরপর মির্জা আব্বাস বলেন, আজ তো হেঁটে এসেছি। কারাগারে এভাবে চলতে থাকলে পরের বারে হুইল চেয়ারে আসতে হতে হবে।
আজ এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। এদিন মির্জা আব্বাসের আইনজীবী শাহিনুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম সাফাই সাক্ষী নিতে আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে মির্জা আব্বাসকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। এরপর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখান বিচারক। এদিকে মির্জা আব্বাসের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। এ বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি।
গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। এদিন মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য ছিল। শাহজাহানপুর থানার একটি মামলায় মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে ৫ নভেম্বর আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ মঞ্জুরুল ইমামের আদালত মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিন এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে আসামি মির্জা আব্বাস ও সাফাই সাক্ষী আদালতে হাজির না হয়ে সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নাকচ করে মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করেন। একই সঙ্গে তিনি এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের অনুপাতহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে। ২০০৮ সালের ১৬ জুন আদালত এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এ মামলার শুনানির সময় আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর শহীদবাগে অভিযান চালিয়ে মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বুধবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন তার জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর রোববার রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। নুরুল ইসলাম। এরপর দুর্নীতির মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্টে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন