নদীর পানি না কমায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সিলেটসহ দেশের রংপুর বিভাগীয় অঞ্চলে উন্নতি হয়েছে। যদিও আক্রান্ত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। এতদিন পানিতে ডুবে থাকা রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সঠিক ত্রাণ না পেয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকেই।
দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০ জুন অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর দলটির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে সীমিত করে দেয় বিএনপি। দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণের ঘোষণাও দেয় দলটি। ২৩ জুন দলীয় প্রচারণা শুরু হলেও অন্তত ৩০টি জেলা কমিটি এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এর মধ্যে দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়া জেলা কমিটিও রয়েছে। তবে তারা ত্রাণ কমিটিকে ছয় লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোমবার (৪ জুলাই) বিএনপির ত্রাণ কমিটির পাঠানো এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তত ৩০টি জেলায় এখনো সরকারি সাহায্য সংগ্রহের লিফলেট বিতরণ করা হয়নি। তবে কয়েকটি জেলা কমিটি কেন্দ্রে অনুদান পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০টি সাংগঠনিক জেলা হলো: দিনাজপুর, সৈয়দপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, নরসিংদী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, বাগেরহাট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ফরিদপুর মহন। , ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, শেরপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল দক্ষিণ, বরিশাল উত্তর, বরিশাল মহানগর। জানতে চাইলে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, গতকাল (৩ জুলাই) ত্রাণ কমিটির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলায় ইতোমধ্যে ত্রাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোও শিগগিরই শুরু হবে। ২১ জুন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বানভাসিদের জন্য ত্রাণ অর্থ সংগ্রহে সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে ২৩ জুন থেকে লিফলেট বিতরণ করা হবে।
পরে দলের শীর্ষ নেতারা সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণ দিতে গেলেও অনেক জেলার নেতারা তাতে অংশ নেননি। এ প্রসঙ্গে ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক দেশের জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে ফলোআপ করছি। কেন্দ্র থেকে অনেক জায়গায় নির্দেশনা পাঠাতে দেরি হয়ে গেছে। সে কারণে অনেকেই কাজ শুরু করতে পারেননি। এসব তদারকির জন্য স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় সাংগঠনিক মনিটরিং কমিটি রয়েছে। সোমবার (৪ জুলাই) বিকেলে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গনমাধ্যমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা অনেক জেলা থেকে ১০ লাখ টাকা, অনেক জেলা থেকে ৬ লাখ ও ৫ লাখ টাকা অনুদান পাচ্ছি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান বলেন, বন্যার্তদের সহযোগিতায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে অন্তত দুই কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এবারই প্রথম যেকোনো দুর্যোগে দেশের মানুষের সরাসরি সহযোগিতা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। এসব বাধা অতিক্রম করে বিএনপি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। দলের ত্রাণ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দলের সব এমপি প্রার্থীর কাছ থেকে নগদ অর্থসহ ত্রাণ সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইকবাল হাসান মাহমুদ মনে করেন, সামনে ঈদুল আজহা থাকায় অনেকেই খরচ করতে চান না। ঈদের পর তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষদের খোঁজেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি ও নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপির মিডিয়া টিমের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য ও চেয়ারপারসন শায়রুল কবির খান সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ম্যাডামের বাসায় আসার পর তার শরীরে নতুন কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছেন। অসুস্থ হয়েও দেশের খবর মিডিয়ায় রাখছেন ম্যাডাম।
উল্লেখ্য, বৃষ্টি না কমায় সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার রাস্তাঘাট, হাট-বাজার এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় এলাকার বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বানভাসিরা জানান, ঠিকমতো ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় না খেয়ে আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা।