Sunday , November 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দিল পিবিআই, প্রকাশ করল ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম

এবার তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা দিল পিবিআই, প্রকাশ করল ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম

সম্প্রতি সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মিতু হ/ত্যা কেন্দ্র করে পিবিআই তদন্তে না মূল ঘটনা রেরিয়ে আসায় ভয়ে নানা ধরনের কৌশল গ্রহন করতে দেখা যায় সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার। এ হত্যাকান্ডে স্ত্রীর হত্যার সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করে পিবিআই। তবে আইনের লোক হওয়ায় তিনি নানা ফাঁকফোকর’ সম্পর্কে তার ধারনা থাকায় তিনি সে ব্যবহারের চেষ্টা চালিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। অবশেষে এই মামলার তদন্ত শেষে রিপোর্ট দিল পিবিআই।

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত শেষে লাগেজ ভর্তি ডকুমেন্ট আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পিবিআই কর্মকর্তারা আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

আদালতে জমা দেয়া ওই লাগেজের ওপর ‘মিতু হ/ত্যা মামলার কেস ডকেট’ শিরোনামে মাহমুদা খানম মিতুর ছবি প্রিন্ট করা হয়েছে। নিচে লেখা হয়েছে পাঁচলাইশ থানার মামলা নং-০১ম তারিখ ০৬/ ০৬/ ২০১৬ ইং, ধারা- ৩০২,৩৪ পেনাল কোড। এ সময় ওই লাগেজটিতে ছোট তালা ঝুলতে দেখা গেছে। লাগেজে ব্যবহৃত প্রিন্ট করা ওই ছবিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো, চট্টগ্রাম ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, তারা মিতু হ/ত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় চার্জশিট জমা দিয়েছেন।

আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অপর ছয় আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, মিতু হ/ত্যার তদন্ত শেষে আমরা চার্জশিট জমা দিয়েছি। তদন্তে আমরা বাবুল আক্তারকে আসামি হিসেবে পেয়েছি।

মিতুকে কেন হ/ত্যা করা হলো জানতে চাইলে নাঈমা সুলতানা বলেন, আমরা বারবার বলেছি কেন হ/ত্যাকাণ্ড হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আমরা তদন্ত করেছি। ১ নম্বর আসামি বাবুল আক্তার কীভাবে জড়িত তা আমরা পেয়েছি।

আসামিদের নাম জানতে চাইলে নাঈমা সুলতানা বলেন, তদন্তে যাদেরকে আসামি পেয়েছি, তাদেরই আসামি করেছি। আপনি বিচার প্রক্রিয়ায় গেলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর কোন মন্তব্য নেই।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার এডিসি কামরুল হাসান বলেন, আমরা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালত এটা দেখবেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলার ধার্য দিন আছে। যেহেতু মামলাটি হ/ত্যা মামলা, তাই এর বিচার কাজ হবে দায়রা জজ কোর্টে।

তদন্তে জানা গেছে, হ/ত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। একজন অ/স্ত্র সরবরাহ করেছে। স্ত্রীকে হত্যার জন্য খুনিদের তিন লাখ টাকা দেন বাবুল আক্তার। খু/নের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাবুলের ‘সোর্স’ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক এক নারীর সঙ্গে বাবুলের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার স্ত্রীকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাস থেকে নামানোর পথে মাহমুদা খানমকে (মিতু) গু/লি করে ও কু/পিয়ে হ/ত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন। ঘটনার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামে ফিরে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হ/ত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, স/ন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তার স্ত্রীকে হ/ত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মামলার গতিপথ পাল্টে যায়। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রে চলে আসে বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তিনি হ/ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পিবিআই।

পরে গত বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়। এ মামলায় বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পিবিআই। রিমান্ড শেষে বাবুল আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে তিনি জবানবন্দি দেননি। পরে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই।

সংস্থাটি জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবার মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের মামলার অধিকতর তদন্ত চলবে। মিতু হ/ত্যার দুটি মামলাই তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এদিকে বাবুল আক্তারের মামলার অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হ/ত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন তার মামলায় অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে বাবুল আখতারের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মিতুর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের অবনতি হয়। এ কারণে মিতুকে হত্যার জন্য লোক ভাড়া করার পরিকল্পনা করে বাবুল।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তে মোশাররফের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পিবিআই।

মামলায় আলামত হিসেবে উপহার দেওয়া বাবুল আক্তারের একটি বই জব্দের পর খু/নের জট খুলে যায়। গায়ত্রী বাবুলকে আহমেদ রশিদ রচিত ইংরেজি ভাষার ‘তালিবান’ নামে একটি বই উপহার দেন। ওই বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়ত্রী অমর সিংয়ের নিজের হাতের লেখা এবং শেষ পাতার পরের খালি পাতাটিতে বাবুল আক্তারের হাতে লেখা ইংরেজিতে তাদের ‘প্রথম সাক্ষাতের’ বিষয়সহ কিছু তথ্য লেখা আছে।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ আদালতের নির্দেশে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পিবিআই নিশ্চিত করেছে বইয়ের পাতায় লেখাগুলো বাবুল আখতারের।

পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, বিভিন্ন ব্যক্তির দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং মামলার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা করে আমরা এই হ/ত্যার রহস্য উদঘাটন করেছি। মিতু হ/ত্যার পর গ্রেপ্তার হওয়া চারজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। জড়িত না থাকার কারণে মামলা।

এ মামলায় বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন কারাগারে রয়েছেন। আর ভোলাইয়া জামিনে আছেন। আর হত্যার পর থেকে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা নিখোঁজ রয়েছে।

এ মামলায় বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন কারাগারে আছেন। আর ভোলাইয়া জামিনে আছেন। আর হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজ আছেন কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা।

প্রসঙ্গত, এ মামলায় তার সম্পৃক্ততা উঠে এসেছে বলে পিবিআই এর পক্ষ থেকে। তদন্তের রিপোর্ট জমার দেওয়ার কথা প্রকাশ করা হয়েছে।

About Babu

Check Also

লিপি ওসমানকে নিয়ে সিটি সেন্টারে শামীম ওসমান

দুবাইয়ের আজমান শহরের সিটি সেন্টার শপিং মলে আবারও দেখা মিললো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *