প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ রেমিটেন্স হিসেবে আসে বাংলাদেশে। কেননা বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিদেশে বসবাস করে। বর্তমান ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনেকটা কমে গেছে যেটা চিন্তার একটি বিষয়। সম্প্রতি টাকার মান স্বাভাবিক করার লক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকে বিদেশে আটকে থাকা ১০ বিলিয়ন ডলার আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
সম্প্রতি দেশে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। খোলা বাজারে ডলার ৯০ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোকে ৭ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স বিদেশে আটকে আছে। এছাড়া রপ্তানি রিকনসিলিয়েশন হিসেবে ব্যাংকগুলোর খারাপ অ্যাকাউন্টে আটকে আছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।
এই সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার (২৫ জুলাই) ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশ দেয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকগুলো এই সময়ে বিদেশ থেকে এসব ডলার না আনলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা দেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোর সহায়তার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আয়নার মতো। এই রিজার্ভ পুরোপুরি কমানো সম্ভব নয়। আমরা রপ্তানি অর্থ ফেরত আনতে আপনার একই সহযোগিতা কামনা করি যেভাবে আপনি রেমিটেন্স আনতে চান। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মের মধ্যে যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, তবে নিয়মের মধ্যে না থাকলে কিছু করার থাকবে না।
ঋণ পুনর্নির্ধারণের মাস্টার্স সার্কুলার প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, কোন গ্রাহককে রিসিডিউলিং সুবিধা দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব এখন ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন এ দায়িত্ব নিতে চায় না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে অনিয়ম পাওয়া গেলে ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনিয়মের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। ঋণ পুনঃতফসিল বিজ্ঞপ্তির ফলে, এখন থেকে ঋণ বিতরণের সময় সবাই সতর্ক থাকবেন।
বৈঠক শেষে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, সংস্কার সবে শুরু হচ্ছে। এই সার্কুলারের মাধ্যমে এখন থেকে পুনঃনির্ধারণ প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হবে। পুনঃনির্ধারণের নতুন নীতি আগের ব্যবস্থার চেয়ে অনেক ভালো। কারণ এ মুহূর্তে তফসিল ও খেলাপি ঋণের পুরো দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বে যার কারণে দেখা দিয়েছে নানারকম সংকটের। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াটাও যুদ্ধের একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। তবে টাকার মান পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সর্বত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।