পৃথক মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও আবুল কাউসার আশাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে পরাজিত প্রার্থী। অপরদিকে কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালামের একমাত্র ছেলে। বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবদল নেতা মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ কারাগার থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তিনি প্রয়াত গেলে তার খাট দলের পতাকা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা চিঠি আকারে এ বার্তা দেন নেতাকর্মীরা। ফলে ইতিমধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে গেছে। খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বার্তায় লেখা ছিল, যখন আমি প্রয়াত হব, আমার খাটিয়ার চাদর একটি দলের পতাকা দিয়ে ঢেকে দিও। মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা জানান, দলের ভালোবাসায় সন্তানদের রেখে দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে পরিবার। দিনের পর দিন মিথ্যা মামলায় জেল খাটছেন। তিনি জামিনের জন্য আদালতে গিয়ে হাজিরা দিয়েছেন। জনগণ ও দলের সেবায় খোরশেদ নিবেদিতপ্রাণ। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন। এই পোস্ট করা যুবদল নেতা শওকত খন্দকার বলেন, কাউন্সিলর খোরশেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এই বার্তা দেন। নেত্রীর দেওয়া বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে পোস্ট করা হয়েছে। বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। মামলা সূত্রে জানা গেছে, মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সৈয়দা আক্তার শিউলী নামে এক নারী বাদী ধর্ষণের মামলা করেন।
আদালত পিবিআইকে মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্তে প্রাথমিকভাবে খোরশেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জামিনে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনের দুই দিন আগে ১৪ জানুয়ারি জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও খোরশেদ আত্মসমর্পণ করেননি। বুধবার তাকে জামিনে ফের কারাগারে পাঠান আদালত। আসামিপক্ষের আইনজীবী শরিফুল ইসলাম শিপলু জানান, কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন এক নারী। সেই মামলার কোনো ভিত্তি নেই। ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে আমরা হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের জামিন পাই। জামিনের মেয়াদ শেষে আত্মসমর্পণ করলে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠান।
উল্লেখ্য, স্থানীয় নির্বাচনের দুই দিন আগে ১৪ জানুয়ারি তার জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও খোরশেদ আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি এবং তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। শ্লীলতাহানির মামলায় কাউন্সিলর খোরশেদ বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তার আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশাকে একই দিন বন্দর থানায় দায়ের করা একটি প্রাণনাশের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী মশিউর রহমান এ আদেশ দেন। বুধবার বিকেলে দুই কাউন্সিলরকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।