সম্প্রতি জামায়াত বিএনপি জোট ছাড়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে রাজনীতি নতুন মোড় নেয়। তবে বিএনপি থেকে তেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়নি তারা বলেছেন এটা জামায়াতের ব্যাপার এ নিয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু নতুন করে জামায়াতকে নিয়ে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) আলী আহমদ আন্দোলন করার কথা বলায় নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
যু/দ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি ও জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির পরস্পরবিরোধী অবস্থান আবারও স্পষ্ট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে দূরে রেখে বিএনপির ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আবারও বিতর্কিত দলটিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দিলেন জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এলডিপির উদ্যোগে কর্নেল অলির সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। হঠাৎ তাঁর এ বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন বিএনপিসহ নিষ্ফ্ক্রিয় জোটটির নেতারা।
বৈঠকে কর্নেল অলি ঘোষণা করেন, আগামী সরকার পতনের আন্দোলনে তার দল এলডিপি, নাগরিক ঐক্য ও জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকবে। এ সময় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ইঙ্গিতও দেন অলি। ওই বৈঠকের পাশেই বসেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম। তিনি ভবিষ্যৎ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিষয়ে একমত ভাষণও দেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াত থাকবে না এমন ঘোষণা দিলেও এ দল নিয়ে নতুন যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। এ অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে আবারও আলোচনায় এসেছেন অলি আহমেদ। প্রকাশ্যে অলির বক্তব্যে খুশি নয় বিএনপি।
তবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ গতকাল দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার। তাই দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্য কোন উপায় নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কর্নেল একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন। আমি এতে দোষের কিছু দেখছি না।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না শুক্রবার বলেছেন, সরকার পতনের একই দাবিতে নাগরিক ঐক্য বরাবরই বিভিন্ন আদর্শিক অবস্থানের দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনকে সমর্থন করেছে। কিন্তু কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে সামনে রেখে নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তথা জোট গঠনের তথ্য সঠিক নয়। যদিও এর আগে ২০১৯ সালে তিনি জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাতে বিএনপির সম্মতি না থাকায় ওই প্ল্যাটফর্ম আর বেশিদূর যেতে পারেনি।
কর্নেল অলির আয়োজনে এবারও বিএনপিতে কোনো ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া নেই। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এলডিপির কর্নেল অলি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বি চৌধুরীকে নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে কথা বলছেন। এই নেতা তার বক্তব্যে বলেন, কর্নেল অলি ও বি চৌধুরী নতুন বিএনপি গঠন করছেন। বিএনপির অনেকেই ওই দলে যোগ দেবেন। এমন প্রেক্ষাপটে কর্নেল অলি তার অবস্থান স্পষ্ট করতে বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন। সেখানে তিনি বিএনপির জাতীয় ঐক্যের সংলাপ ও রূপরেখার প্রতি সমর্থন জানান।
কর্নেল (অব.) অলি ও বি চৌধুরী ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তারা বিএনপির ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। কিন্তু ১-১১-এর আগে এই দুই নেতা তাদের অনুসারীদের নিয়ে বিএনপি ছেড়ে আলাদা দল গঠন করেন। সে সময় বিএনপিতে ভাঙনের জন্য মূলত দায়ী ছিলেন এই দুই নেতা। এ সময় তাদের দলও আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দেয়। আবার এলডিপি ও বিকল্পধারাকে একীভূত করে একটি দল গঠন করা হয়। যদিও সেটা আর বেশিদূর এগোয়নি। এবারও এ দুই নেতা মিলে আলাদা বিএনপি গঠন করছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রহমান বিভিন্ন সময়ে জানান দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তার পরও তাঁকে নিয়ে বিএনপির অন্দরমহলের সন্দেহ রয়েই গেছে। কর্নেল অলি আর বি চৌধুরীর তৎপরতার মতো সংবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বিএনপির হাইকমান্ড। এ ধরনের সংবাদকে গুজব বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন দলের সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে বিব্রত কর্নেল অলি নিজের অবস্থান সুসংহত করতে মাঠে নেমেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর কৌশল হিসেবে তিনি জামায়াতসহ আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন। কিন্তু যাই হোক না কেন, এই শেষ বয়সে কর্নেল অলি আর বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না বলে তাদের বিশ্বাস। আবার অনেক নেতাই জামায়াত ও তার মাখামাখিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা এটাকে বিএনপির সঙ্গে কর্নেল অলির সমঝোতার কৌশল বলে মনে করছেন।
এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, কর্নেল (অব.) অলিকে বিশ্বাস করা যায় না। এর আগে তিনি এই জামায়াতের কারণে বিএনপি ত্যাগ করেছিলেন। তখন তিনি জিয়া পরিবার আর বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক বিষোদ্গার করেছিলেন। বিএনপির অনেক ক্ষতি করেছেন তিনি। এখন তিনি সেই জামায়াতের সঙ্গেই সখ্য গড়েছেন।
প্রসঙ্গত, জামায়াতকে নিয়ে কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমদ আন্দোলনের করার বক্তব্য দেওয়ায় পর থেকে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক মহলে। অনেকে বলছেন এতে করে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বিএনপির মধ্যে।