নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) কানাডায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেও রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে, প্রথমত কানাডায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হতে হয় তাকে। আর এরই মধ্যে এবার জানা গেল, পরপর দুই দেশে ঢুকতে ব্যর্থ হওয়া সাবেক মুরাদ হাসান আজ বিকেলেই দেশে ফিরছেন। বর্তমানে তিনি দুবাই বিমানবন্দরেই আছেন।
কানাডায় ঢুকতে চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মুরাদ হাসান দুবাইয়ের ভিসা পাওয়া চেষ্টায় ছিলেন। তবে জানা যাচ্ছে, দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই তার। তাই আজ (রোববার) বিকেলে চূড়ান্তভাবে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
দুবাই বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বনানীর ডানা এভিয়েশন লিমিটেডের মাধ্যমে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে দেশে ফেরার টিকিট চূড়ান্ত করেছেন ডা. মুরাদ হাসান। এমিরেটসের ইকে-৫৮৬ নম্বর ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। ফ্লাইটের ফার্স্ট ক্লাস ক্যাটাগরির টিকেট কেটেছেন মুরাদ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত করোনা টেস্টের স্যাম্পল দিয়ে দুবাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩-এ এমিরেটসের লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন তিনি।
এদিকে মুরাদ হাসান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, এজন্য বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকজন। বিমানবন্দর এলাকার মূল ফটকের বাইরের সড়কে প্রায় ৩০-৪০ জন নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে মুরাদকে রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিএম জহিরুল নামে একজন বলেন, মুরাদ বেশ কিছুদিন বিকৃত কথাবার্তা বলছিল। ইসলাম ও নারীবিদ্বেষী ছিল। সে প্রতিনিয়ত দাবি করতো, তার এসব বেফাঁস কথাগুলোর বিষয় নাকি প্রধানমন্ত্রীও অবগত আছেন। তার এই মন্তব্য নারী সমাজকে অপমান করেছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে বিব্রত করেছে। আমরা চাই উনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাকে দেশের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়া হোক।
আবদুল্লাহ আল নোমান নামে একজন বিক্ষোভকারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুরাদ বাংলাদেশের নারীদের বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নারী নেতৃত্ব, চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আমরা এগুলোর প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি। মুরাদকে যেহেতু কানাডা ও দুবাই থাকতে দেয়নি, আমরা চাই এমন লোক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। মুরাদকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাত্র গ্রেফতার করার অনুরোধ করছি আমরা। সেজন্য আমরা এখানে মানববন্ধন করেছি। বিকেলে আমরা আবার আসবো।
বিমানবন্দর এলাকায় মুরাদবিরোধী বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করেননি বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসআই জানান, কিছু লোক প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা ১১টার দিকে চলে য়ায়। তারা বলেছে, বিকেলে আবার আসবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে মুরাদ হাসানের মন্তব্যের ব্যাপারে সমালোচনার মধ্যেই একটি টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয় গত রোববার।
তখন তীব্র নিন্দার মুখে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম চলে যান।
এরপর গত সোমবার রাত প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। পরদিন মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ পত্র পাঠান।
মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগের পর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘যদি তার কোনো ভুল হয় তাহলে যেন ক্ষমা করা হয়।’ তবে তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা ক্ষমার যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এরই মধ্যে দেশে ফেরার খবর শুনে বিমানবন্দরে প্রতিবাদ শুরু করেছেন হাজার মানুষ।