বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে হবে কি হবে না, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। বেশ কিছু নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের বিপক্ষে মতামত এসেছে। ইভিএম মেশিনের কারিগরি ত্রুটির কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে ও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এখন নির্বাচন কমিশন কোন পথে হাটবে ইভিএম মেশিনের বিষয়ে, সেটা নিয়েও অনেকটা সংশয়ে রয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে বিলম্ব কমিশনকে উদ্বিগ্ন করেছে। আলোচনার মাধ্যমে যতটা সম্ভব সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হবে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। সেখানে ইভিএমে ভোটগ্রহণ বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় রাত ৮টায়। ফলে সাংবাদিক ও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা শুনতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কিছু ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ মেলেনি। কেন ভোট বিলম্বিত হচ্ছে, যেই অভিযোগটা এরআগে আমরা কখনো পাইনি। এটা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে তোলে। আপনি ইতিমধ্যেই জানেন যে, আমরা কেন মিটিং ডেকেছি। রংপুর সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। তবে কিছু সংকটের কথা বলা হয়েছে। আমরা যে অভিযোগ পাচ্ছিলাম তার মধ্যে কিছু মিডিয়ার কারণে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বড় অভিযোগ ছিল যে ভোটিং ধীর ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ মেলেনি। ভোট কেন বিলম্বিত হচ্ছে, যার অভিযোগ আমরা আগে পাইনি। এটা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে তোলে। আমরা তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন, যারা সেখানে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেখান থেকে যারা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন তাদের মতামত নেওয়ার জন্য।
সিইসি বলেন, আমরা যদি আপনার কাছ থেকে সরাসরি না শুনি, তাহলে সং”কটের কিছু কারণ আমরা পেয়েছি, পুরো বিষয়টি এখনো আমরা পাইনি। সেগুলো পর্যালোচনা করে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করব। কিন্তু অন্যান্য নির্বাচনে এসব সমস্যা আমরা পাইনি। আমাদের মিডিয়া কর্মীরা কিছু কথা বলেছেন, যা যৌক্তিক মনে হয়েছে। মতামত নেওয়ার দরকার ছিল, আমরা নিয়েছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে মতামত নিয়ে আলোচনা করবো, আলোচনার মাধ্যমে যতটা সম্ভব তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবো। আমরা চাই স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। আমরা আশা করি, সেখানে এই জিনিসগুলো আমাদের প্রত্যাশা। এই ব্যাপারে আপনারা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। সামনেও সহযোগিতা করবেন বলে আশা রাখি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা যারা এখানে ছিলেন তারা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেছেন। এখন কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব, কেন দেরি হলো, কেন মিললো না। তবে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলে নাই এটা আমি বলেছি, না মেলার ঘটনাটি খুব বেশি ঘটেনি। কিন্তু বিলম্ব হয়েছিল। বিলম্ব অনেক কারণে হতে পারে। কিন্তু, আমরা এখনও এই বিষয়গুলি সঠিকভাবে জানি না। আমরা গভীরভাবে চিন্তা করবো। পরীক্ষা করে কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহন করার কথা নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে। এদিকে শতভাগ আসনে এই মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহনের চিন্তা ভাবনাও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তবে সেটা মেশিন কেনার বাজেট পাশের পর বাস্তবায়ন সম্ভব অন্যথায় নয়। তবে স্থানীয় ও সংসদ সদস্য পদ খালি হওয়া আসনগুলোতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহনের সময় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাতে চিন্তিত নির্বাচন কমিশন।