দেশে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের শেষ নেই। মাঠপর্যায়ে যারা ভূমি জরিপের কাজ করেন, তারা টাকার বিনিময়ে অনেক অনিয়ম করেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি আত্মসাতের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
বিশেষ করে গ্রামের অশিক্ষিত দুর্বল জনগোষ্ঠী ভূমি প্লটকারীদের সাথে যেতে পারে না। ফলে বঞ্চিতরা আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হলেও আইনি লড়াইয়ের কারণে তাদের ভোগান্তি ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শিকার হতে হয়। অনেকে মামলা করতে গিয়ে জীবিকা হারিয়ে শেষ পর্যন্ত বার্ধক্যে মারা যান; কিন্তু প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের অনিয়ম, ভোগান্তি ও বিলম্ব বন্ধে সরকার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদে ‘ল্যান্ড ক্রাইম প্রিভেনশন অ্যান্ড রেমেডিস বিল-2023’ শিরোনামে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এ আইনে অন্যের জমি দখল, জাল দলিল তৈরি ও হস্তান্তর করলে সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সংসদে উত্থাপনের পর বিলটি পরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
সাধারণত জমি সংক্রান্ত বিরোধ আদালতে পৌঁছায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর রায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দখলদারের পক্ষে যায়, যার পিছনে কার্যত ‘নির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের 8 এবং 9 ধারা’ কাজ করে। কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে কোনো সম্পত্তি দখল করলেও তাকে সহজে বেদখল করা যায় না। তবে নতুন আইনের মাধ্যমে সেই বাধা দূর হতে যাচ্ছে।
এর ফলে, নাগরিকদের তাদের নিজস্ব জমির নিরবচ্ছিন্ন দখলের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ভূমি জালিয়াতি ও প্রতারণার ক্ষেত্র চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। জমি সংক্রান্ত অপরাধের আইনি কার্যক্রমও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে জমির প্রকৃত মালিকদের অধিকার রক্ষার জন্য এ ধরনের আইন আরো আগেই প্রণয়ন করা উচিত ছিল। এখন আইনটি পাস হওয়ায় ভূমি জরিপ সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।