সম্প্রতি সরকার বিরোধী বিভিন্ন বিভ্রান্তীকর তথ্য প্রচার করায় কয়েটের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মারাধর করেন বলে জানা যায়। তাকে মা/রধর করার এক পর্যায় সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানা যায়। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে হল কর্তৃপক্ষ তাদের জানালে ওই শিক্ষার্থী নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তদন্তের মাধ্যমে মূল ঘটানা সম্পর্কে জানানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সরকারবিরোধী বার্তা আদান-প্রদান (চ্যাট) করার অভিযোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এক শিক্ষার্থীকে বেদম পিটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সোমবার রাতে প্রায় ৫ ঘণ্টা মারধরের পর তাকে হল প্রশাসনের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশে দেয় ওই শিক্ষার্থীকে।
ভুক্তভোগী ছাত্রের নাম জাহিদুর রহমান। তিনি কুয়েটের ইসিই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। থাকতেন ড. এম এ রশিদ হলের ১১৭ নং রুমে। ওই হলের গেস্ট রুমে তাকে মা/রধর করা হয়। তার বাড়ি ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ইন্দ্র নারায়ণপুর গ্রামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা মামলায় বাদী হয়েছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামানিক। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারি জাহিদুর রহমানকে একই হলের শিক্ষার্থীরা জঙ্গি/সরকার বিরোধী আখ্যা দিয়ে মারধর করে প্রভোস্ট রুমে আটকে রেখেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে জাহিদুর রহমানের সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চ্যাটের মাধ্যমে সরকারবিরোধী ও মানহানিকর মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক তথ্য আদান-প্রদান করার তথ্য পাওয়া যায়। যা নিয়ে কুয়েট ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনার উপক্রম হয়।’
মামলার পর জাহিদুর রহমান খুমেক হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের ভর্তির নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে শরীরের বিভিন্ন স্থানে, ডান হাত, ডান পা, কনুই, হাতের গোড়ালিতে ক্ষত নিয়ে সার্জারি বিভাগ-১ এর আওতায় ভর্তি করা হয়েছে।পরে প্রিজন সেলে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের প্রিজন সেলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, জাহিদুরের শরীরে স্যালাইন চলছে। এক কিশোর তার খাবার, ওষুধ নিয়ে আসছে। তার মাধ্যমে কথা হয় জাহিদুরের সঙ্গে।
জাহিদুরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হলের বড় ভাইয়েরা তাকে গেস্ট রুমে ডেকে নেন। এরপর ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে তার মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানতে চান। একপর্যায়ে চড়, লাথি, ঘুষি মা/রা শুরু করেন। পরে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে সারা শরীরে পিটিয়েছে। সবচেয়ে বেশি মে/রেছে পায়ে। তারা শুধু জানতে চেয়েছে, আমি কোন দল করি। আমার সঙ্গে কে কে আছে? আমি কোনো দল করি না শুনে-রাত ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে মেরেছে।
আটকের খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে ভোলা থেকে খুলনায় ছুটে যান জাহিদুরের বড় ভাই নাঈম হোসেন। তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যকে বলেন, আমার বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আমি তজুমদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। জাহিদুরও ছাত্রলীগ করতো। কিন্তু কুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর তাবলীগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ভালো লোকদের সঙ্গে মেশে দেখে আমরা নিষেধ করিনি।
তিনি বলেন, জাহিদুর এসব লিখেছেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না।যদি করেও থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাররা আছেন। হল প্রভোস্ট আছেন-তারা বিচার করবেন। এভাবে নির্মমভাবে পেটাবে কেন ছাত্রলীগ?
নগরীর খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর আমরা ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার চিকিৎসা চলছে। আমাদের তদন্ত নিয়ম অনুযায়ী চলবে।
মা/রধরের বিষয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতির পদ শূন্য। সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলের প্রভোস্ট এম ডি হামিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে জাহিদুর। বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় হলের শিক্ষার্থীরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করি। মা/রধরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের জিম্মায় আসার পর কেউ মা/রধর করেনি। আগে কী হয়েছে জানি না।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ একইভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে ফজলুল হক হলের একটি কক্ষে আটকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এর মধ্যে শাহীনুজ্জামানের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আলামিনের চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সরকারে বিরুদ্ধে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার করার সাথে তার সম্পক্ততা পাওয়ায় এ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ তদন্তের কথা জানানো হয়েছে।