আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগসহ রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার ক্ষমতা আসতে ভিন্ন কৌশলে আগাচ্ছে বলে জানায় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। দলের শীর্ষ নেতাদের দাবি দলটি দীর্ঘ ক্ষমতায় থাকার কারনে আভন্তরীন কন্দোলরে কারনে দলের ভিতরে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রতিফলন গুলো স্থানীয় নির্বাচনে দেখা গেছে। তবে সেসব ভুল আর করতে চায় না দলটি এবার নির্বাচনী প্রার্থী বাছাইয়ে ভিন্ন কৌশলের কথা জানিয়েছে দলটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংকল্পবদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ জন্য প্রতিটি সংসদীয় আসন ধরে ধরে জরিপ করা হচ্ছে। এ জরিপের কাজ মনিটরিং করছেন দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন ও আওয়ামী লীগের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, এবার কপাল পুড়ছে চলতি সংসদের ১৪০ এমপির। তাদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্যাতন, মামলা-হামলা করে হয়রানি, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে ‘এমপি লীগ’-‘ভাই লীগ’ বলয় সৃষ্টি, জনবিচ্ছিন্ন, এলাকাবিমুখ, নিয়োগ, টেণ্ডার বাণিজ্য, জলমহাল-বালুমহাল দখল, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণসহ বিস্তর অভিযোগ উঠে এসেছে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রভাবশালী এমপিদের নামও রয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় এমপিরা।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাবে। এতে বিতর্কিত, অসন্তুষ্ট এমপিদের বাদ দিয়ে এলাকায় ক্লিন ইমেজের ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়াই হবে অগ্রাধিকার।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যেকোনো নির্বাচনে মনোনয়ন পরিবর্তন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ক্ষেত্রবিশেষে আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে কার নেই। কে ভোট পাবেন, কে পাবেন না।’
দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। কারণ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এমপিদের বাদ দিয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তির প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার থাকা যাবে। বিতর্কিত এমপিদের পরিবর্তন না করে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হবে, তেমনই ওই প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্নের মধ্যে থাকতে হবে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দেশ-বিদেশে সবার কাছে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক, সেটাও প্রত্যাশা দলটির হাইকমান্ডের। মুখে যাই বলুক বিএনপি দলের অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। আর সে কারণে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো রকম ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। সে কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জনগণের ম্যান্ডেট নিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর ওপর এবার ভরসা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এতদিন এই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, যে দলটির সব তিনি চেনেন, ভালো চেনেন, ভালো বোঝেন। তিনি দল হোক নির্বাচনে মনোনয়ন হোক, সময় উপযোগী করে সাজিয়ে থাকেন। এবারও সেভাবেই সাজাবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেসব এমপির বিরুদ্ধে ন্যূনতম অভিযোগ আছে তাদের নৌকা দেবেন না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনের একাধিক উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহের এ কাজটি নিয়মিত করা হয়। অতীতেও তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীন দলের অনেক এমপি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন।তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের আওয়ামী লীগে এনে যেমন পুনর্বাসন করেছেন, তেমনই আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশেষ বলয়। তাদের ভেদ করে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে যেতে পারেন না আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। অনেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় বসে ‘স/ন্ত্রাসী ও মাস্তান’ দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। স্ত্রী, শ্যালক, ভাই, আত্মীয়স্বজন দিয়ে কেউ কেউ ‘ছায়া এমপি’ হিসেবে সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।এমপির বিরুদ্ধে কথা বললেই হা/মলা-মামলায় বাড়িছাড়া করা হচ্ছে দুঃসময়ের কর্মীদের। কিছু সংসদ সদস্য নিজেরাই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর হা/মলা চালাচ্ছেন। এলাকার খাস জলমহাল, বালুমহাল ও হাটবাজারের পুকুর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাই-ভাতিজাদের। কপাল পুড়বে এই স্টাইলের এমপিদের।ভাই-ভাগ্নেদের দায়িত্ব দিয়েছেন এলাকার পুকুর, খাস জলমহাল, বালুমহাল ও হাটবাজারের ইজারা দেখভালের। এই ধাঁচের এমপিদের কপাল পুড়বে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ এবার শক্ত প্রতিপক্ষ হবে এমন ভাবনা থেকেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে বিতর্কিত প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার টেবিলে দলের অনেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, ‘এমপিবলয়’ সৃষ্টি, বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল সৃষ্টির বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক দলের নেতারাও দলীয় সংসদ সদস্যদের বিষয়ে মৌখিক ও লিখিত আকারে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা জানতে গোপনে মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজও শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের অনেক প্রভাবশালী সংসদ সদস্য-মন্ত্রী এ ফাঁদে পড়তে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১৪০টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবার মনোনয়নে বড় চমক দেবেন এবং এবং যার কাজকর্ম নিয়ে ন্যূনতম বিতর্ক রয়েছে তাকে তিনি বাদ দেবেন। ক্লিন ইমেজ নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোই লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের গুরুত্ব বিবেচনায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। অবশ্যই সৎ, নির্ভীক প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’ নানক বলেন, ‘যাদের অভিযোগ আছে তাদের নিয়ে সমীক্ষা চলছে। নেতার কাছে সব রেকর্ড আছে। বারবার মাঠ জরিপ করে রেকর্ড নিচ্ছেন। ওই প্রটোকল অনুযায়ী কোনো এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে রেহাই দেওয়া হবে না। যত বড় নেতাই হোন না কেন, কেউ রেহাই পাবে না। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে কোনো ধরনের ঝুকি নিতে চাই না আওয়ামীলী সেই লক্ষে নিয়ে কাজ করছে তারা। বিতর্কিত কোনো প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন না এমনটি জানিয়েছে শীর্ষ নেতারা।