সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে এক নারীকে তার স্বামী ও সন্তানের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তার সাথে গর্হিত কাজের ঘটনা ঘটেছে, যেটা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার পর দেশের প্রধানতম পর্যটন স্থান কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবং এই ঘটনার পর কক্সবাজারে পর্যটকদের ভ্রমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, পর্যটন মৌসুমে প্রতারক ও বখাটেদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি শিকার হন ভ্রমনে আসা পর্যটকেরা। আবাসিক হোটেলে ঐ নারীকে নিয়ে গর্হিত কাজের ঘটনার পর এবার কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে টনক নড়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের। পর্যটকদের ভ্রমনে এবার নতুন নিয়ম চালু করলো জেলা প্রশাসন।
এই নিয়মের অধীনে পর্যটকদের হোটেলে রুম বুক দেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও দাখিল করতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসক। এছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য নেয়া হয়েছে আরো গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সিদ্ধান্ত। গতকাল (শুক্রবার) অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
এর আগে, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার জেলায় ভ্রমণকারী পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালযয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরসহ পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সার্বিক আলোচনা শেষে সাতটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এগুলো হলো- সকল আবাসিক হোটেলে রুম বুক দেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও দাখিল করতে হবে। আবাসিক হোটেলগুলো অনুসরণীয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি (এসওপি) প্রণয়ন করা হবে। প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা সম্বলিত ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে হবে।
পর্যটকদের সুবিধার্থে ডলফিন মোড়ে সুবিধাজনক স্থানে একটি তথ্যকেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে। প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু/জোরদার করতে হবে। হোটেল-মোটেল জোনে অবৈধ পার্কিং এবং সমাজবিরোধীদের কর্মকাণ্ড বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে ও জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার দেশের প্রধান পর্যটন স্থান হওয়ায় এখানে অহরহ ঘটে থাকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা, যেটা নিয়ে অনেক পর্যটক পড়ে যান বড় ধরনের সমস্যায়। অনেক নারী পর্যটকদের সাথে অশোভন আচারন করে থাকে এখানে আসা বখাটেরা। যেটা নিয়ে অনেক সময় তাদের সাথে বাকবিতন্ডা এবং এরপর মারধরের ঘটনা ঘটে থাকে এমন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা হয়ে থাকে। এদিকে এখানে পন্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে আকাশচুম্বি করে পর্যটকদের পকেট ফাঁকা করেন ব্যবসায়ীরা, যেটা নিয়েও কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।