দেশের প্রধান পর্যটন স্থান কক্সবাজার, যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে। এই পর্যটন স্থানে পর্যটকদের ভিড় জমে সাধারণত শীতের শুরু থেকে বসন্তের শেষ পর্যন্ত। এই পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে সেখানে বখাটে এবং হয়রানি করা একশ্রেণীর অসাধু মহলের দৌরত্ব বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে এক নারী পর্যটক গণগর্হিত কাজের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার কারণে এই পর্যটন স্থানের নিরাপত্তার মান সম্পর্কে পর্যটকদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গর্হিত কাজের শিকার হওয়া ওই নারীর ঘটনার পর এবার নারীদের জন্য একটি বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নারীদের জন্য আলাদা ড্রেসিংরুম এবং লকার রুম নির্মাণ করা হবে এমন প্রতিবেদন করেছে দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান গনমাধ্যমকে বলেন, ‘কক্সবাজারে যেসব নারী পর্যটক বা পর্দানশীন নারী আসবেন, তাদের জন্য ১০০ বা ১৫০ ফিটের একটা সংরক্ষিত এলাকা হবে। যারা ইচ্ছুক হবেন বা স্বেচ্ছায় চাইবেন, তারা সেখানে গিয়ে পানিতে নামতে পারবেন। খুব তাড়াতাড়ি সেটি চালু করা হবে। সৈকতে নারীদের জন্য আলাদা ড্রেসিং রুম ও লকার রুম করা হবে।’
তিনি আরও জানান, পর্যটন এলাকা নারীবান্ধব করার জন্য সৈকতে যারা কাজ করেন, তাদের বড় একটি অংশে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী পুলিশ রয়েছেন। হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন, এ ব্যাপারেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেল কর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের হোটেল মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আমাদের যদি এক-দুই মাস সময়ও লাগে, তারপরেও এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে পর্যটনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।তবে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, অবস্থা কিন্তু অতোটা খারাপ নয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ-সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে এক নারীকে কয়েকজন বখাটে যুবক অপহরন করার পর সেখানে একটি হোটেলে নিয়ে আটকে রাখার মাধ্যমে তার গর্হিত কাজ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২২ শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বুধবার কক্সবাজারের একটি গেষ্ট হাউজ থেকে তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটার পর কক্সবাজারে যে সমস্ত নারী পর্যটক তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয় নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তাভাবনা করছে জেলা প্রশাসক। এর আগে ২০১৯ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়ান এক তরুনীর সাথে গর্হিত কাজ করার চেষ্টা চালায় উশৃংখল কয়েকজন ব্যক্তি, এমন ধরনের অভিযোগ ওঠে। এবার কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়।