সেই জাপানী মা ডা. নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সন্তানদের বাবা ইমরান শরীফ তাদের বাংলাদেশে থাকা দুই সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের বাবা-মা দুজনেই তাদের যার যার নিজেদের কাছে রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেন। বেশ দীর্ঘ দিন ধরে এই মামলাটি চলমান রয়েছে, কিন্তু এই মামলার বিষয়টি একটু ভিন্ন হওয়ায় এর বিচারকার্য সম্পন্ন হতে বেশ কিছুটা সময় লাগছে। এবার আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের দুই সন্তান আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডাক্তার নাকানো এরিকোর অর্থাৎ তাদের মায়ের নিকট থাকবে। রাজধানী ঢাকার বারিধারা এলাকায় অবস্থিত হোটেল ইসকর্ট প্যালেসে ওই মা তার দুই সন্তানকে নিয়ে থাকবেন।
তবে ওই দুই সন্তান তার মায়ের নিকট থাকলেও তার বাবা ইমরান শরিফ প্রত্যেকদিন সকাল ৯ টা হতে রাত ৯ টা, এই সময়ের মধ্যে যেকোন সময়ে গিয়ে তাদের সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারবেন। আজ ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী যিনি এই মামলার প্রধান বিচারপতি হিসেবে রয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এর মাধ্যমে এই আদেশ দিয়েছেন।
আদেশে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে সন্তানদের মাকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধ নিয়মিত আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ।
আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর দুই শি’শুকন্যা জেসমিন মালিকা (১১) ও লাইলা লিনাকে (১০) নিজের কাছে নেওয়ার জন্য জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা আপিলের বিষয়ে শুনানির বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে বলা হয়েছে, ওই দুই মেয়ে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মায়ের কাছে থাকবে। তবে, মায়ের কাছে থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যে কোনো সময় বাবা ইমরান শরীফ শি’শুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর মেয়েদের দুই দিন গুলশানে তার মায়ের বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। আদেশ অনুযায়ী, সেই দিন রাত ১০টা থেকে মায়ের সঙ্গে থাকার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ওইদিন রাতে বাবার পক্ষ থেকে মায়ের কাছে দুই সন্তানদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সকালে জাপানি মায়ের পক্ষ থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল বিভাগে বিষয়টি অবগত করা হয়। সেদিন তাৎক্ষণিক দুই মেয়েসহ বাবাকে আদালতে তলব করেন আপিল বিভাগ। পরে সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা খাসকামরায় ডেকে নেন দুই কন্যা সন্তানদেরকে। তাদের সঙ্গে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলার পর তাদের বাবা-মাকেও খাস কামরায় ডেকে নেওয়া হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের উভয়পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকরা বসে কথা বলেন।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ওইদিন রাতেই মায়ের কাছে সন্তানদের বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বাবা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে আদালত অবমাননা করেছেন বলে মন্তব্য করেন আপিল বিভাগ।
এর আগে, ২১ নভেম্বর জাপানি দুই সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
এর আগে গতবছর ২১ শে নভেম্বর ওই দুই সন্তানকে তাদের বাবার হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়ে রায় প্রদান করেন উচ্চ আদালত। এদিকে ওই জাপানি মা তার সন্তানদেরকে তার হেফাজতে রাখার জন্য মামলা পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে সন্তানদের বাবা ইমরান শরীফ তার সন্তানদেরকে তার নিজের হেফাজতে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এদিকে জাপানী মা তার তৃতীয় সন্তানকে দেশে তার মায়ের নিকট রেখে তিনি তার সন্তানদের তার নিকট রাখার জন্য মামলা পরিচালনা করতে বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এদিকে এই মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা ঐ সন্তানদের পিতা ও মাতার মধ্যে সম্পর্ক ফেরানোর জন্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সন্তানদের দিক বিবেচনা করে মানবিক দিক থেকে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনে যাওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।